স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহকে হারানোর বেদনার দিন আজ

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে খুব কম নায়কই এসেছে তাঁর মতো। বাংলা সিনেমার দর্শকেরাও খুব কম দেখেছে তাঁর মতো নায়ক। প্রথম চলচ্চিত্র থেকেই তিনি ছিলেন সুপারহিট নায়ক। অসাধারণ ও সাবলীল অভিনয় দক্ষতা দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন সর্বশ্রেণির দর্শকের মন। উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল ছবি।

একজন সফল চিত্রনায়ক হিসেবে যখন পুরোপুরি প্রস্ফূটিত তাঁর নায়কজীবন, ঠিক তখনই ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে থেমে গেল তাঁর গতিময় ও প্রাণবন্ত জীবন। ‘রহস্যময় আত্মহত্যা’ তাঁকে কেড়ে নেয় দেশব্যাপী লাখো ভক্তদের কাছ থেকে। বাংলা সিনেমা হারিয়ে ফেলল তাঁর ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও সফল নায়ককে। আজ এই মহানায়কের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।

বাংলা চলচ্চিত্রে মাত্র চার বছরের সময়কালে এই অঙ্গনে তিনি যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, যে জনপ্রিয়তা তিনি অর্জন করেছিলেন, তাতে সবার মনেই আফসোস ও বেদনা না থেকে যায় না যে দীর্ঘ জীবন লাভ করলে বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনে তিনি আর কী অবদান রেখে যেতে পারতেন! কিন্তু কি এক কালো অধ্যায়ের শিকার হয়ে যেন হঠাৎ করেই থমকে গেল স্বতস্ফূর্ত ও ছন্দময় গানের মতো সাবলীল তাঁর জীবন। সালমান শাহ মানেই একদিকে যেমন অল্প সময়ে অনেক কিছু অর্জন করা এক মানুষ, তেমনি অসময়ে ঝরে যাওয়া এক নক্ষত্রের মতো হাহাকার ধ্বনিও সবার মনে বিরাজ করে তাঁর অকাল প্রয়াণের কারণে।

যেভাবে যাত্রা শুরু সালমানের

১৯৯৩ সালের প্রথমদিকে রোজার ঈদে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। অসাধারণ সাড়া জাগায় সেই চলচ্চিত্রটি। সুপার হিট ব্যবসা করে। এই সিনেমায় তাঁর সাথে জুটি ছিলেন বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম সফল চলচ্চিত্রনায়িকা মৌসুমী। সেটি ছিল মৌসুমিরও প্রথম ছবি। এই জুটির রসায়ন দারুণ উপভোগ করে দর্শকেরা। সিনেমাটি ও এর নায়ক-নায়িকার কথা আলোচিত হতে থাকে দেশজুড়ে। ছবির গানগুলো ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে।

সিনেমাটির পরিচালনায় ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। হিন্দি ছবি থেকে রিমেক করা এই বাংলা ছবির জন্য তিনি নতুন নায়ক-নায়িকা খুঁজছিলেন। একসময় নায়িকা হিসেবে খুঁজে পেলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় মডেল মৌসুমিকে। কিন্তু তখনও পাচ্ছিলেন না নায়ককে। অবশেষে শাহরিয়ার চৌধুরি ইমন নামের এক ছেলের সন্ধান পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রে রীতি আছে একটু অন্য ধরনের ‘নায়কোচিত’ নাম নিয়ে সিনেমায় যাত্রা শুরু করার। এই নামটি অনেক সময় পরিচালকেরাই তাদের দিয়ে দেন। যাই হোক, শাহরিয়ার চৌধুরি ইমন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেন ‘সালমান শাহ’ নাম নিয়ে।

সফলতার শীর্ষে সালমান

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে উপহার দিতে থাকেন হিট সব সিনেমা। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ১৯৯৫-এ মুক্তি পায় ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিল’, ১৯৯৬-এ মুক্তি পায় ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘সত্যের মৃত্যু নাই’-এর মতো অত্যন্ত ব্যবসা সফল সব ছবি। তাঁর চলে যাওয়ার পরেও মুক্তি পায় আরও পাঁচটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে তাঁর নামের জোরেই অত্যন্ত ভালো ব্যবসা করে বা জনপ্রিয় হয় ‘বুকের ভিতর আগুন’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ও ‘আনন্দাশ্রু’। অত্যন্ত জনপ্রিয় হয় আনন্দাশ্রু সিনেমার গানগুলো।

আরও পড়ুন:  আ. লীগের কর্মসূচি প্রত্যাহার হয়নি, প্রেস রিলিজটি ভুয়া

মোট ২৭টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল তাঁর। দুয়েকটি বাদে বেশিরভাগই ছিল অত্যন্ত ব্যবসাফসফল বা হিট। অভিনয় দক্ষতা, সংলাপে সাবলীলতা, সময়কে ছাড়িয়ে যাওয়া স্টাইল, ফ্যাশন দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে করে নিয়েছিলেন স্থায়ী আসন। ক্রমেই বাংলা সিনেমাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন নতুন উচ্চতায়। একঘেয়ে অভিনয় আর স্টাইল দেখতে দেখতে ক্লান্ত দর্শকদের সামনে তিনি হয়ে আসেন নতুনের আবাহন। তার রোমান্টিক, মেলোড্রামা, ফ্যামিলি ড্রামা, অ্যাকশন, প্রতিবাদ সব চরিত্রেই ছিল নতুত্বের স্বাদ। তার কাউবয় হ্যাট, গগলস, লং কোটে ডিটেকটিভ লুক, হুডি শার্ট, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, কানে দুল, ফেড জিন্স, মাথার স্কার্ফ, ফ্যাশন সেন্স- সবকিছুর মধ্যেই নতুনত্ব পেয়েছিল দর্শকেরা। ফলে তিনি হয়ে ওঠেছিলেন তারুণ্যের স্টাইল আইকন।

প্রথমে মৌসুমীর সাথে জুটি বেঁধে বেশিরভাগ সিনেমায় অভিনয় করলেও পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত সফল জুটি গড়ে তোলেন শাবনূরের সাথে। বাংলা সিনেমারই অত্যন্ত সফল জুটি এই ‘সালমান শাহ-শাবনূর’ জুটি। রাজ্জাক-কবরী জুটির পর খুব কম জুটিই এরকম সফল ও জনপ্রিয় জুটি হিসেবে নাম করতে পেরেছে। একসাথে ১৪টি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তারা। মোসুমী-শাবনূর ছাড়াও লিমা, শাবনাজ, শামা, শিল্পী, কাঞ্চি, বৃষ্টিসহ বেশ কিছু নায়িকার সাথে অভিনয় করেছেন। রোমান্টিক ও মেলোড্রামায় বেশি কাজ কারলেও তার চরিত্রগুলোতে বৈচিত্র ছিলো দেখার মতো। কখনও ছাত্রনেতা, কখনও প্রতিবাদী যুবক, কখনও গ্রামের ছেলে, কখনও প্রেমের জন্য ঘরছাড়া তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

সালমানের সিনেমায় শুধু অভিনয় আর ফ্যাশন নয়, গানও ছিলো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তার প্রতিটি সিনেমাই ছিলো দারুণ সব গানে ভরপুর। অনেক গানই কালজয়ীতে রূপ নিয়েছে ইতিমধ্যেই। তরুণ শিল্পীরা এখন চলচ্চিত্রের গান গাইতে গেলেই সালমান অভিনীত সিনেমার গানগুলোই বেশি গেয়ে থাকেন। সালমান শাহ কতটা জনপ্রিয় সেটা এই সময়ের অভিনেতাদের জিজ্ঞেস করলেই বোঝা যায়। বাংলা চলচ্চিত্রে এখন যারা কাজ করছেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা সবাই বলেন সালমান তাদের আইডল, তাকেই অনুসরণ করেন তারা।রোমান্টিক নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তো ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী একজন। সালমান শাহকে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখে তাঁর দর্শকদের মনেও যেন প্রেমিক-হৃদয় আস্তানা গেঁড়ে বসেছিল আরও শক্তিশালীভাবে। পর্দায় তাঁর সাথে শাবনূর বা মৌসুমীর প্রেম দেখে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাও নিশ্চয় ভাবত, ইশ, যদি এত সুন্দর হতো আমাদের প্রেমটাও।

অকালে ঝরে গেল নক্ষত্র

তবে, হঠাৎ করে বিনা মেঘে বজ্রপাতে তাঁর ভক্তদের নির্বাক করে দিল একটি দুঃসংবাদ। দিনটি ছিল ১৯৯৬-এর ৬ সেপ্টেম্বর। আজকের দিনের মতোই এক শুক্রবার। তখন শুক্রবারে বিটিভিতে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য বসে থাকত সবাই। বাংলা সিনেমার মাঝখানেই বিকেল পাঁচটার খবরে সংবাদ পাঠকের কণ্ঠে ভেসে এলো দুঃসংবাদটা। প্রিয় নায়ক সালমান শাহ আর নেই। আকাশ ভেঙে পড়ল চলচ্চিত্রপ্রেমী প্রতিটি মানুষের মাথায়। এ কীভাবে হতে পারে? সালমান কীভাবে এভাবে চলে যেতে পারেন! অনেকে বিশ্বাস করছিল না, অনেকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু যা ঘটে গেছে সেটা কোনো গুজব ছিলো না, ছিলো সত্য। অনেক নিষ্ঠুর সত্য। সেদিন আনুমানিক সকাল ১১টায়ই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।

আরও পড়ুন:  রহস্যময় পুরুষ কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই!

কী ঘটেছিল সেদিন

সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ’র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না।

নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, “বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ’র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ’র বাবা) জোর করে উপরে যান। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ’র স্ত্রী)।”

“উনি (সালমান শাহ’র বাবা) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ’র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।”

বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ওই টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ’র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী।

“খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ’র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে।”

“আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে,” সংবাদমাধ্যমকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী।

ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।

এরপর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে।

নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।

আরও পড়ুন:  ‘আমার হাজবেন্ড সালমান শাহকে খুন করাইছে আমার ভাইরে দিয়া’

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ।

সে সময় সারা দেশজুড়ে সালমানের অসংখ্য ভক্ত তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেন বলেও খবর আসে পত্রিকায়।

সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের। ওদিকে, সালমান শাহ’র মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়ে।

সালমান শাহ’র মৃত্যুর সংবাদ দর্শকদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে এত বছর পরেও অনেকে তার প্রিয় নায়ককে ভুলতে পারেননি। সালমানের মৃত্যুর দুই দশকের বেশী পরেও তাকে নিয়ে দর্শকদের মাঝে আলোচনা থামেনি।

জন্ম ও পারিবারিক জীবন

সালমান শাহর জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়ায়। বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, মা নীলা চৌধুরী করতেন রাজনীতি, একাধিকবার সংসদ নির্বাচনও করেছেন। একমাত্র ছোট ভাইয়ের নাম চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরান (ইভান)।

সালমান পড়াশোনা করেন খুলনার বয়রা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। একই স্কুলে তার প্রথম ছবির নায়িকা মৌসুমীও তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমণ্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি ও ধানমণ্ডির ড. মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন। ১২ই আগস্ট ১৯৯২ সালে তিনি তাঁর খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরা ছিলেন একজন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের ২টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেন এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্রের তার স্টাইল ও ফ্যাশন নিয়ে পরামর্শ দেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সালমান নিজেই।

ধূমকেতুর মতোই তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্রে। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি যেভাবে দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন, যে অসাধারণ অভিনয়শৈলী দেখিয়ে তৈরি করেছিলেন লাখো-কোটি ভক্ত, সেটাই তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে স্থায়ীভাবে। শুধু দর্শক ও ভক্তদের হৃদয়েই নয়, তিনি অনুপ্রেরণার উৎস ও পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন তাঁর পরের প্রজন্মের অনেক অভিনেতার মাঝে। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান, সিয়াম আহমেদ, আরিফিন শুভ সহ অনেকেই তাদের অভিনেতা হিসেবে বেড়ে ওঠার পিছনে সালমান শাহের অদৃশ্য অনুপ্রেরণা ও প্রভাবকে অকপটে স্বীকার করে নেন।

এভাবেই তিনি হয়ে আছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক। এভাবেই আগামী দিনগুলোতেই তাঁকে বাংলাদেশের মানুষ স্মরণে রাখবে নিঃসন্দেহে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *