চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আজ (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ৭০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল (চমেক) কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই সদস্যও আহত হয়েছেন।

গতকাল শনিবার সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের ২টি, নিরাপত্তার বাহিনীর ১ টি এবং প্রক্টরিয়াল বডির ১টিসহ মোট ৪টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে স্থানীয়রা।

আহতদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. টিপু সুলতান বলেন, ‘আনুমানিক প্রায় ৬০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ৩-৪ ধাপে চমেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা সব হিসেব করতে পারিনি।’

আরও পড়ুন:  বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কখনই চায়নি বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করুক: শেখ পরশ

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি বাসায় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ভাড়া থাকেন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করলে কেন দেরিতে এসেছেন, তাই গেট খুলতে রাজি হন না দারোয়ান। দীর্ঘক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচির পর একপর্যায়ে গেট খোলা হয় এবং কেন চেঁচামেচি করছেন এজন্য ওই ছাত্রীকে থাপ্পড় মারেন দারোয়ান। পরে ওই ছাত্রী তার কয়েকজন সহপাঠীকে ফোন দিলে তারা আসেন এবং দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। তারা দারোয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করলে সে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ সময় খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া করলে স্থানীয়রা একত্র হয়ে ইট–পাটকেল মারা শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন:  চবির ৫ম সমাবর্তন, বর্ণিল সাজেছে ক্যাম্পাস

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বাসার গেট রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আজকে কাজে বাইরে গিয়েছিলাম, ১১টার দিকে ফিরে এসে দেখি গেট বন্ধ। আমি অনেকবার ধাক্কা দিয়েছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেননি। পরে গেট খুলে আমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দু’বার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। হামলার সময় বাচামিয়ার দোকানের সামনে শিক্ষার্থীরা গেলে ৩টা টর্চ লাইটের আলো ফেলে হামলা করা হয়। এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।

রাত ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আরও পড়ুন:  ড. সেলিম-কে বিএইচবিএফসি`র চেয়ারম্যান হিসেবে পুন.নিয়োগ

এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এরমধ্যে অনেকের পরীক্ষাও রয়েছে। তাই আজ (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।’

এদিকে স্থানীয়দের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *