ঢাবি ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে মুখোমুখি ছাত্রদল-শিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্যর মৃত্যুর ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, বাম সংগঠনের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ছাত্রদল এবং বামপন্থি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন ভিসি এবং প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে শিবির এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বিদ্যমান প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

মঙ্গলবার সাম্য নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢামেক জরুরি বিভাগে জড়ো হন তার বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের একটি দল ঢামেক থেকে প্রথমে একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এরপর উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বের হয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তার সঙ্গে উচ্চ বাক্য বিনিময় ছাত্রদল নেতাদের। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘তোরা আমাকে মেরে ফেল’। পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে উদ্যানে স্পটে যান; যেখানে সাম্য নিহত হন এবং পরে ঢামেকে সাম্যকে দেখতে যান তারা।

উপাচার্য বাইরে থাকতে থাকতে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ মূল আরেকটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা উপাচার্য এবং প্রক্টরের প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। তারা বুধবার দাবির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা দেন। তখন সময় প্রায় রাত সাড়ে ৩টা।

অন্যদিকে, উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ এবং প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের ব্যাপারে শুরু থেকে ইতিবাচক দেখা গেছে শিবির হিসেবে পরিচিতদের আর কিছু শিক্ষার্থীর। তারা এ ঘটনায় উপাচার্য বা প্রক্টরের পদত্যাগের কোনো কারণ দেখেন না।

আরও পড়ুন:  অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাবি বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

তাদের মতে, ভিসি ও প্রক্টর ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা আনয়নের চেষ্টা করলেও বামপন্থি কতিপয় শিক্ষকদের বাধায় সেটা রাখা যায়নি। এখানে প্রশাসনের দোষ দিয়ে লাভ নেই।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদও ভিসি বা প্রক্টরের পদত্যাগের পক্ষে নন। তারা হামলার বিচার দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছে। তাদের মতে, প্রশাসন চেষ্টা করে যাচ্ছে এখানে প্রশাসনের অবহেলা নেই। এ ছাড়া এখন প্রশাসন পরিবর্তন হলে ডাকসু অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে তাদের।

অন্যদিকে উপাচার্য নিয়াজকে জামায়াতের মনে করেন ছাত্রদল নেতারা। যদিও নিয়াজ আহমেদ নানা সময়ে বলেছেন, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবে শুরু থেকে নিয়াজকে যে কোনো ইস্যুতে চাপে রাখার প্রবণতা দেখা যায় ছাত্রদল কিংবা বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে। অনেকে মনে করেন, কুয়েটে শিবিরের শিক্ষার্থীরা জোর করে বিএনপিপন্থি ভিসিকে অপসারণ করিয়েছে, সেটার প্রতিবাদে এবার ঢাবির ভিসিকেও তারা সরাতে চান।

ছাত্রদলের বক্তব্য হলো- এর আগে ক্যাম্পাসে তোফাজ্জল নামে একটি ভবঘুরের মৃত্যু হয়েছে। এরপর একজন শিক্ষার্থীকে খুন করা হয়েছেন। ছয় মাসে দুটো খুনের পর ভিসির আর পদে থাকার অধিকার নেই। তারা স্লোগান দিয়েছেন, ‘ছয়মাসে দুই খুন, ঢাবি ভিসির অনেক গুণ’। বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর হাদী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ক্যাম্পাসে দুইটা মার্ডার হয়েছে। এতে প্রক্টর ও ভিসির কোনো দায়-দায়িত্ব দেখে না শিবিরগুলা।

আরও পড়ুন:  তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ !

এদিকে জুলাই ঐক্যের সংগঠক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এবি জুবায়ের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের দায় গণপূর্ত বিভাগের। শাহবাগ থানা প্রশাসনের। অযথা যাকে-তাকে দোষারোপ না করে শাহবাগ থানায় আসুন। আমরা শাহবাগ থানা ঘেরাও করতে যাচ্ছি। সাম্য হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, উদ্যানকে মাদকমুক্ত করা ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে উদ্যানের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবিতে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে সাম্য হত্যার ঘটনায় বিচার দাবি করে মিছিল বের করলে তাকে এবং মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদকে ছাত্রদলের নেতারা ‘ফুটেজখোর’ অ্যাখ্যা দেওয়ার অভিযোগ করেন এবি জুবায়ের। মুসাদ্দিক জুলাই ঐক্যের সংগঠক। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদল এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ তাদেরকে শিবিরের লোক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে দুজনের কেউই শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেননি।

এদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটিকে শিক্ষার্থীরা বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে নেন। তবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফাসহ অনেকে ফেসবুকে ব্যাপকভাবে এটির প্রতিবাদ জানান। তিনিসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে জনপরিসর নষ্ট না করার জন্য চাপ দেন।

আরও পড়ুন:  বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে শনিবার ঢাকায় সমাবেশ

পরে যান নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা নিয়ে আসে প্রশাসন। ক্যাম্পাসে পুনরায় বাড়তে থাকে ভবঘুরে বহিরাগতদের আনাগোনা। ব্যাপারটিকে ভালোভাবে নেননি শিক্ষার্থীরা। ফলে এবার সামিনা লুৎফাকে নিয়ে নেতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

৫ আগস্ট পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে দুইবার ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ সময় ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বামসংগঠনগুলো অংশ নেয়। তবে ধীরে ধীরে বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে মতবিরোধ বাড়ে ছাত্রদল এবং বামসংগঠনগুলোর। পরে ঐক্যের জন্য আরেকটি মিটিং ডাকলেও ছাত্রদল যায়নি। তবে মিটিংয়ে ছাত্রশিবির অংশ নেয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নামে নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশ হলে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্যের জায়গাটি একেবারে দূরে সরে যায়। তবে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় ছিল। গুঞ্জন ছিল, ডাকসু হলে একত্রে প্যানেল দিতে পারে শিবির, ছাত্রসংসদ।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় সংগীতে বাধা প্রদান ইস্যুতে শিবিরকে দায়ী করে একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছে ছাত্রসংসদ, ছাত্রদল, ছাত্রইউনিয়নসহ বাম সংগঠনগুলো। বর্তমানে প্রধান সংগঠনগুলোর মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *