চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ইতিহাসের সাক্ষী ২২ হাজার গ্র্যাজুয়েট

চবির পঞ্চম সমাবর্তনে সম্মাননা পেলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, পিএইচডি ও এমফিলসহ প্রদান করা হয় হাজারো শিক্ষার্থীর সনদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রইল ২০২৫ সালের ১৪ মে। দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত চবির পঞ্চম সমাবর্তন শুধু একাডেমিক অর্জনের উৎসবই নয়, ছিল সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণার এক অসাধারণ মিলনমেলা।

সমাবর্তনের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যাকে চবি কর্তৃপক্ষ সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি প্রদান করেছে। একাডেমিক ও সামাজিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ ডিগ্রি প্রদানকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসনের জন্য গর্বের বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ড. ইউনূস নিজেই এদিন সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে তার বক্তৃতায় দেশ, শিক্ষা এবং নেতৃত্ব বিষয়ে প্রেরণাদায়ক দিকনির্দেশনা দেন।

আরও পড়ুন:  গণতন্ত্রপ্রেমী, মুক্তিকামী মানুষের মাঝে শহীদ আসাদ স্মরণীয় হয়ে থাকবেন : প্রধানমন্ত্রী

২২ হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েটের উপস্থিতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসজুড়ে আয়োজন করা হয় বিশাল পরিসরের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন ২২ হাজার ৫৬০ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, যাদের হাতে নিজ হাতে সই করা সনদ তুলে দেন চবির উপাচার্য।

আনন্দঘন এ আয়োজনে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা শেষে তাদের কৃতিত্ব স্বীকৃতি পেলো আনুষ্ঠানিকভাবে। অনেকেই বলেন, এই দিনটি তাদের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।

পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি প্রদান

শুধু স্নাতক বা স্নাতকোত্তরই নয়, গবেষণাক্ষেত্রেও অবদান রাখার জন্য ২২ জন গবেষককে পিএইচডি এবং ১৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একাডেমিক গবেষণাকে উৎসাহিত করতে এই স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

আরও পড়ুন:  নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা দরকার : প্রধান উপদেষ্টা

গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের উপস্থিতি

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। বক্তৃতায় তারা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, গবেষণায় উদ্ভাবন ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ কয়েকজন উপদেষ্টাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

চবির দীর্ঘ বিরতির পর ফের সমাবর্তন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালে। বিভিন্ন প্রশাসনিক ও পরিস্থিতিগত কারণে দীর্ঘদিন সমাবর্তন হয়নি। এবারের আয়োজনে তাই ছিল বিশেষ গুরুত্ব ও আবেগ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে এই আয়োজন সম্পন্ন করেছে। ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল সাজসজ্জা, নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তির আধুনিক ব্যবস্থাপনা।

আরও পড়ুন:  প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গুরুত্ব

সমাপ্তি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি শিক্ষার শক্তি, স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং ভবিষ্যতের পথচলার জন্য অনুপ্রেরণার এক নতুন অধ্যায়।

এই আয়োজনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আজ তাদের অর্জনের গর্বে উদ্ভাসিত। আর সমাজও পেলো একটি বার্তা—সঠিক নেতৃত্ব, সম্মান এবং মূল্যায়নই পারে ভবিষ্যৎকে আলোকিত করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *