শুল্ক থেকে রেহাই পেতে বাংলদেশকে যে শর্ত দিল যুক্তরাষ্ট্র

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক এড়াতে আলোচনা করতে গিয়ে ইলন মাস্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। 

সম্প্রতি মার্কিন পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট–এর কলামিস্ট ম্যাট বাই এক কলামে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সেখানে বলা হয়েছে, শুরুতে খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ওই কর্মকর্তা তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি করে তুলা আমদানি করতে চাপ দিয়েছিলেন।

কলামে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম তুলা আমদানিকারক দেশ; তারা পশ্চিম আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে বেশি তুলা আমদানি করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক থেকে রেহাই পেতে চাইলে দেশটিকে আরও বেশি মার্কিন তুলা কিনতে হবে — এই বিষয়টি জোর দিয়ে বলেন ওই কর্মকর্তা। এই শর্ত খলিলুর রহমান দ্রুতই মেনে নেন।

কিন্তু ওই বৈঠকের পরই তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ককের সঙ্গে দেখা হয় খলিলুর রহমানের। কলামে বলা হয়, মাস্ক স্টাররলিংক ও বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে চলমান আলোচনা নিয়ে কথা বলতে চান। যদিও স্টারলিংককে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে না দিতে স্থানীয় টেলিকম কোম্পানিগুলোর চাপ ছিল।

আরও পড়ুন:  প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফিরে আসবোই: শেখ হাসিনা

সাবেক কূটনীতিক ও জাতিসংঘ কর্মকর্তা খলিলুর রহমান ইউনূস প্রশাসনের অন্যতম প্রভাবশালী মধ্যস্থতাকারী হয়ে উঠেছেন। রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিষয়ক দূত হিসেবে যোগ দিলেও পরে তিনি ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা’ পদে আসীন হন, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পদ-পদবির অভিধানে নজিরবিহীন।

সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরও তার সহযোগিতায় সম্ভব হয় বলে আলোচনা রয়েছে। ব্যাংককে ভারতের প্রভাবশালী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়ও তাকে দেখা যায়।

ঢাকা কিংবা ওয়াশিংটন—কোনো পক্ষই তার এই হোয়াইট হাউস সফর কিংবা মাস্কের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেনি।

তবে পরবর্তীতে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ৯০ মিনিটের এক ভিডিও কলে মাস্ক ও স্টারলিংকের নির্বাহী রিচার্ড গ্রিফিথসের সঙ্গে কথা হয়েছে ইউনূস ও খলিলুর রহমানের। ওই বৈঠকে মাস্ককে বাংলাদেশে সফরে এসে স্টারলিংক সিস্টেমের উদ্বোধন দেখার আমন্ত্রণ জানান ইউনূস।

আরও পড়ুন:  সাজেকে পুড়ে ছাই ৯৪ রিসোর্ট রেস্তোরাঁ দোকান

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, মাস্কের সঙ্গে চমৎকার বৈঠক হয়েছে এবং তিনি তার সঙ্গে একযোগে কাজ করার অপেক্ষায় আছেন।

নেত্র নিউজ ইউনুসের প্রেস সচিব, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করেছে।

ম্যাট বাইয়ের কলামে বলা হয়, খলিলুর রহমানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবশালী উপদেষ্টা ইলন মাস্কের এই বৈঠকের আলাদা প্রেক্ষাপট আছে। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের নতুন এই সরকার হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন করছে ও ইসলামপন্থি জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে — এই সংক্রান্ত ভারতের সন্দেহজাগানিয়া অভিযোগের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন ট্রাম্পের ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স প্রধান তুলশি গাবার্ড।

তবে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা কূটনৈতিক দেনাপাওনার আভাস উড়িয়ে দিয়ে স্টারলিংককে ভবিষ্যৎ ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে এক ধরনের সুরক্ষাকবচ হিসেবে তুলে ধরছেন। এক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পূর্বের আওয়ামী লীগ সরকার বিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেট ব্লককে ব্যবহার করেছে। সেই চর্চার অবসান চায় নতুন সরকার।

আরও পড়ুন:  সৌদিকে ৩৫০ কোটি ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা

গত মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্টারলিংককে দশ বছরের লাইসেন্স দিয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *