অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শ্রমিকের ন্যায্য স্বীকৃতি এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে একটি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন ও শ্রমমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নতিকরণে আমরা কাজ করছি। যার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনাও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) মহান মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে গড়বো এদেশ নতুন করে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনগণের অভ্যুত্থান একটি নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছে। তবে সেই নতুন বাংলাদেশ বাস্তবে রূপ নেবে না, যদি শ্রমিকদের অবস্থা আগের মতোই থেকে যায়। আজকের স্লোগানটি আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন:  আগামী ১৮ ডিসেম্বর বিজয় র‌্যালি করবে আওয়ামী লীগ

তিনি বলেন, শ্রমিক মালিকের সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মে দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক। পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার ভিত্তিতে আমরা একটি আত্মনির্ভরশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

শ্রমিকদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে মালিক শ্রমিকের ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শ্রমিকের সম্ভাবনা বিকাশের মাধ্যমে দেশ গঠনে তাদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে অঙ্গীকার অনুযায়ী আগামী জুনে অনুষ্ঠিতব্য ১১৩তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ। আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো শ্রম কমিশনের রিপোর্ট ও সুপারিশমালা। এই সুপারিশমালাই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য। আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।

আরও পড়ুন:  নিজেকে শ্রমিক মনে করি: শাবনূর

ড. ইউনূস বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা শুধু শ্রমিকের অধিকার নয়, এটি শিল্প উন্নয়নেরও অন্যতম শর্ত। শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন হলে তা পুরো অর্থনীতিতে প্রতিফলিত হয়। শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। শ্রম আদালতের কার্যক্রমকে গতিশীল করা হয়েছে, যার ফলে মামলা নিষ্পত্তির হারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

শ্রমিকের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি শিল্প রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেসব কারখানায় বকেয়া বেতন নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ ছিল, সেখানে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক পর্যায়ে বকেয়া পরিশোধ করে কর্মপরিবেশ সচল রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশকে নতুন করে গড়তে হলে শ্রমিক-মালিকের ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত হয়ে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং শ্রমিক মালিকের পারস্পরিক সুসম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে এক যোগে কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের অভ্যুত্থানের মতো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া আর স্বপ্ন থাকবে না, বাস্তবতা হবে।

আরও পড়ুন:  শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনসারদের সংঘর্ষ

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, শ্রম সংস্থা কমিশনের প্রধান সুলতান উদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *