সংস্কারের অনেক সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য নয়

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাবের অনেকগুলো এখনই বাস্তবায়ন যোগ্য নয় বলে সরকারকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মূল আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কয়েকটি সংশোধনীও রয়েছে। যেসব প্রস্তাবের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা আছে, সেগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন। রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত হলে ইসি তা বাস্তবায়ন করবে। তবে ১০-১২টি সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ে এ মতামত পাঠানো হয়। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্য থেকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর’ বিষয়ে মতামত চেয়ে সরকারের দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইসি তার এ অবস্থান জানিয়েছে। সরকারের কাছে ইসির মতামত পাঠানোর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

জানা গেছে, ইসির মতামতে আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী শব্দ যুক্তের প্রস্তাব এখনই বাস্তবায়নযোগ্য বলে জানানো হয়েছে। সশস্ত্রবাহিনী যুক্ত হলে সেনাবাহিনী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর মতো মোতায়েন করা যাবে। বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হওয়ার পরই তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করার প্রস্তাব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিচার কার্যক্রম আইসিটিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) চলমান। ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে চার্জশিটভুক্তরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। একইভাবে আদালত কর্তৃক ফেরারিদের অযোগ্য করার বিধানেও একই মত দিয়েছে। পলাতক নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে এ সুপারিশ করেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এছাড়া ব্যালট পেপারে নিরাপত্তা স্টিকার রাখার বিধান যুক্তের প্রস্তাব আগামী নির্বাচনের আগে বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সরকারকে জানিয়েছে ইসি।

আরও পড়ুন:  ফের ভারতীয় ও চীনা পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ইসির মতামত চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা এটা চূড়ান্ত করে ফেলেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হবে, সেগুলো নিয়ে কমিশনের কোনো দ্বিমত নেই।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, যেসব সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের কিছু নেই, আলোচনা বা সহমত পোষণের কিছু নেই, সেগুলো আমরা (অনুমোদন) দিয়ে দিয়েছি। যেসব সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য সম্পৃক্ত, সেগুলো এড়িয়ে গেছে কমিশন। তিনি বলেন, যেগুলো মনে হয়ে পলিটিক্যাল ঐকমত্যের বিষয় আছে সেগুলো নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করিনি। আর যেসব সুপারিশের বিষয়ে আমরা মতামত আগে দিয়েছি, সেগুলোর বিষয়ে বলেছি এটার ব্যাপারে আগে মতামত দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, মোটাদাগে বলা যায়, যেসব বিষয়ে শুধু আরপিও সামান্য সংশোধনের মাধ্যমে করা সম্ভব এবং আর্থিক সংশ্লেষ নেই সেগুলো সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। কিছু বিষয় রয়েছে রাজনৈতিক; রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে আশু বাস্তবায়নযোগ্য। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয় রয়েছে সেগুলোতে আমরা মতামত দেইনি। নির্বাচনি আইন সংস্কার প্রস্তাবে যেগুলো সরাসরি ইসি সম্পৃক্ত ও আর্থিক সংশ্লেষ নেই, এমন ১০-১২টি সুপারিশ রয়েছে, যেগুলো আমরা আশু বাস্তবায়নযোগ্য বলেছি।

আরও পড়ুন:  তাপমাত্রা নিয়ে দুঃসংবাদ, চার বিভাগে বৃষ্টির আভাস

জানা গেছে, আরপিও ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধনের সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে বলে ইসি মতামত দিয়েছে। অর্থাৎ এ দুটি আইনে এমন কিছু ধারা সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে, সেসব সংশোধনী বাস্তবায়ন করতে আর্থিক সম্পৃক্ততা যুক্ত হবে। তবে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন সংশোধনের সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ নেই বলে জানানো হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, গণমাধ্যম নীতিমালা, পর্যবেক্ষক নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালাসহ বেশ কিছু সংশোধনীর বিষয়ে কাজ চলমান রয়েছে।

যুক্ত হচ্ছে সশস্ত্রবাহিনী : আরপিও সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়ে ইসি একমত হয়েছে। এর মাধ্যমে আরপিওর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি কোস্টগার্ডের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ’ সংযোজন হবে। এর ফলে ভোটে সশস্ত্রবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসাবে মোতায়েনের পথ প্রশস্ত হবে। আরপিওতে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার’ সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত থাকায় নবম সংসদে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের মাধ্যমে সেনা মোতায়েন করা হয়। পরে আরপিও থেকে সশস্ত্রবাহিনী বাদ দিয়ে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন:  সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন ড. ইউনূসকে

আওয়ামী লীগ নেতাদের অযোগ্য করার বিধানে মত নেই ইসির: ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি হিসাবে ঘোষিত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য করার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়। আর আইসিটিতে চার্জশিটভুক্ত আসামিদেরও একইভাবে অযোগ্য করার সুপারিশ করা হয়েছিল। ওই বিধান যুক্ত হলে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের যারা বিদেশে পলাতক রয়েছেন তাদের মধ্যে যারা ফেরারি হবেন তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একইভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে আইসিটিতে চার্জশিট হবে তারাও নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এসব বিধান যুক্তের সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্যের মধ্যে রাখেনি ইসি। তারা বিষয়টি রাজনৈতিক মতামতের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে তারা বাস্তবায়ন করবে বলে সরকারকে জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *