টাইটানিক থেকে বেঁচে ফেরা যাত্রীর ‘শেষ চিঠি’ রেকর্ড দামে বিক্রি

ঐতিহাসিক টাইটানিক জাহাজডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক যাত্রীর লেখা একটি চিঠি নিলামে তুলে রেকর্ড দামে বিক্রি করা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চিঠিটি ৩ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেনরি অ্যালড্রিজ অ্যান্ড সন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চিঠিটি কেনার জন্য নিলামে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়েছে। অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যক্তিগত সংগ্রাহক সর্বোচ্চ দাম হাকিয়ে চিঠিটি কিনে নেন। হেনরি অ্যালড্রিজ অ্যান্ড সন জানায়, চিঠিটার মূল্য ৬০ হাজার পাউন্ড হবে অনুমান করা হয়েছিল। তবে এটি প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির মতে, টাইটানিকের ভেতর থেকে লেখা কোনো চিঠির এত উচ্চ মূল্য এর আগে কখনো ওঠেনি।

আরও পড়ুন:  ফিরতি ফ্লাইট শুরু কাল, সৌদিতে ২১ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

উল্লেখ্য, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল একটি হিমশৈলের (আইসবার্গ) সাথে ধাক্কা লাগার পর টাইটানিক জাহাজ ডুবে যায়। এতে ২২০০ যাত্রীর মধ্যে প্রায় ১৫০০ যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় খুব অল্প সংখ্যক যাত্রীই বাঁচতে পেরেছিলেন। সেই ভাগ্যবানদের একজন কর্নেল আর্চিবাল্ড গ্রেসি।

জাহাজডুবির ঘটনার মাত্র পাঁচদিন আগে ১০ এপ্রিল চিঠিটি লিখেছিলেন গ্রেসি। ওইদিনই তিনি প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে ইংল্যান্ডের সাউথহ্যাম্পটন থেকে জাহাজে উঠেছিলেন। ইউরোপ ভ্রমণ শেষে নিউইয়র্কে ফিরছিলেন তিনি। এরপর জাহাজটি আয়ারল্যান্ডের কুইন্সটাউন (বর্তমানে কর্ক) যাওয়ার পথে ১১ এপ্রিল গ্রেসি এটি মেইল করেন।

চিঠিটিকে ‘ভবিষ্যদ্বাণীমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। চিঠিতে সেই সময় ৫৪ বছর বয়সি গ্রেসি জাহাজটি সম্পর্কে নিজের ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন। যেমন এক জায়গায় গ্রেসি লেখেন, ‘এটি একটি দুর্দান্ত জাহাজ। কিন্তু এর ব্যাপারে চূড়ান্ত মন্তব্য করার আগে আমাকে আমার যাত্রার শেষের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ এর কয়েকদিন পরই প্রকাণ্ড জাহাজটি ডুবে যায়।

আরও পড়ুন:  প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সাংবাদিক মনির হায়দার

বেশিরভাগ যাত্রীর মৃত্যু হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান গ্রেসি। কিভাবে বেঁচে ফিরলেন তা নিয়ে ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট দ্য টাইটানিক’ নামে একটা বই লেখেন তিনি। যা পরের বছর অর্থাৎ ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয়। বইতে গ্রেসি লেখেন, জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর তিনি সমুদ্রে ঝাঁপ দেন এবং সাঁতার কেটে কেটে একটি উল্টে যাওয়া লাইফবোটে উঠতে সক্ষম হন।

গ্রেসি আরও লেখেন, ‘যেসব পুরুষরা মূলত ওই লাইফবোটে উঠতে পেরেছিলেন, তাদের অর্ধেকের বেশি পরে ক্লান্তি বা শীতে মারা যান।’ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলেও গ্রেসি হাইপোথার্মিয়ায় ভুগতে থাকেন। পরবর্তী মাসগুলোতে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং ১৯১২ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডায়াবেটিসের জটিলতা উল্লেখ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *