চুক্তি না হলে ইরানে আক্রমণের নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাষ্ট্র : ট্রাম্প

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় যদি নতুন কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় ‘দলের নেতৃত্ব দেবে’। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।

সাক্ষাৎকারটি গত ২২ এপ্রিল নেওয়া হয়েছিল। তবুও ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন যে একটি চুক্তি হতে পারে।

পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা অথবা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতেও রাজি আছেন। টাইমকে ট্রাম্প বলেন, ‘হয়তো আক্রমণ করতে হতে পারে, কারণ ইরানের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না।’

এই নতুন হুমকি এমন সময়ে এলো, যখন ওয়াশিংটন ও তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং শনিবার ওমানে তৃতীয় দফার বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। শেষবার রোমে হওয়া বৈঠকের শেষে উভয় পক্ষ আশাবাদ প্রকাশ করেছিল, যদিও কোনো বিস্তারিত তথ্য তারা জানায়নি।

এই আলোচনা থেকে ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েলকে এখনো বাইরে রাখা হয়েছে, যদিও মঙ্গলবার ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের পর বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বিষয়ে একই পক্ষে রয়েছি।’

আরও পড়ুন:  ভারতে ২৪টি বিমানবন্দর বেসামরিক সেবার জন্য বন্ধ ঘোষণা

টাইম ম্যাগাজিন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিল, তিনি কি ইসরায়েলকে ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা হামলা চালানো থেকে বিরত রেখেছিলেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তা ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের থামাইনি। তবে আমি তাদের জন্য পরিবেশটা আরামদায়কও করিনি।

কারণ আমি মনে করি, আমরা কোনো হামলা ছাড়াই একটি চুক্তিতে আসতে পারি।’ তিনি আরো বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, আমি সেই সিদ্ধান্ত তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বলেছিলাম, আমি বোমা ফেলার চেয়ে চুক্তি বেশি পছন্দ করব।’নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টেনে নেওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, এই বিষয়টি ট্রাম্প অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল) হয়তো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু আমরা এখানে ঢুকব না।

’ তবে ট্রাম্প যোগ করেন, ‘যদি চুক্তি না হয়, আমি স্বেচ্ছায় যুদ্ধে ঢুকতে পারি। চুক্তি না হলে, আমি দলের নেতৃত্বে থাকব।’২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে করা পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গ করেছিলেন এবং তেহরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছিলেন। পশ্চিমা শক্তি ও ইসরায়েল বহুদিন ধরে তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করার অভিযোগ করে আসছে। ইরান সব সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং  জোর দিয়ে বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশসহ ১৪১ দেশে যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য এআই চ্যাটবট চালু

টাইম ম্যাগাজিন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করে জানতে চায়, তিনি কি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বা প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছুক? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘নিশ্চয়ই।’

দুই দেশের মধ্যে শেষ সরাসরি মুখোমুখি আলোচনা হয়েছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে, যার ফলে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পশ্চিমা শক্তিগুলো অভিযোগ করে বলছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জনের উদ্দেশ্যে উচ্চ মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে। তাদের দাবি অনুযায়ী এটা একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য অপ্রয়োজনীয়।

অন্যদিকে তেহরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে ২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কার্যক্রম সীমিত করেছিল। তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান তাদের সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে এবং তা ত্বরান্বিত করে।

আরও পড়ুন:  আমি এই দিনটির স্বপ্ন দেখেছি: ডি মারিয়া

সূত্র : এএফপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *