নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো শিশুটির মরদেহ

নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর নালায় পড়ে মারা যাওয়া শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে নগরের চকবাজার কাপাসগোলা সড়কে প্যাডেলচালিত রিকশা থেকে খালের পানিতে পড়ে যায় মা, দাদি ও শিশুটি। স্থানীয়দের চেষ্টায় মা ও দাদিকে উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ শিশুটিকে তখন খুঁজে পাওয়া যায়নি। শনিবার সকাল ১০টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

শিশুটির মামা মারূফ জানান, আসাদগঞ্জ থেকে সেহেরিজকে নিয়ে তার মা ও দাদি মামার (মারূফ) বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিল। বাড়ির কাছে এসে রাস্তায় পানি থাকায় রিকশা নেয় তারা। কিন্তু নালার পাশে থাকা বাঁশের বেষ্টনী খুলে ফেলার কারণে তারা রিকশা নিয়ে নালায় পড়ে যান। পরে সেহেরিজের মা সালমা ও দাদি আয়েশাকে উদ্ধার করা গেলেও শিশুটি রাতভর নিখোঁজ থাকে। তাকে উদ্ধারে রাতভর চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। সকালে পাওয়া যায় সেহেরিজের নিথর দেহ

স্থানীয়দের দাবি, নালার পাশে বাঁশের একটি ব্যারিকেড ছিল, যা কিছুদিন আগে ‘খাল পরিষ্কারের’ অজুহাতে তুলে ফেলা হয়। আজকের হালকা বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে খালের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, আর তাতেই ঘটে এই দুর্ঘটনা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছে, এই মৃত্যুর জন্য দায়ী- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতা।

আরও পড়ুন:  রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ঘটনার পরপরই সেখানে যান চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত। তিনি ডুবুরি দলের তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেন। শিশুর পরিবারকে সান্ত্বনা জানান এবং উদ্ধারকারী দলের জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, অরক্ষিত নালার পাশে দ্রুতই নিরাপত্তা ব্যারিকেড বসানো হবে।

চট্টগ্রামে নালায় পড়ে নিখোঁজ ও মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের জুনেও নালায় পড়ে স্রোতে তলিয়ে যায় সাত বছরের এক শিশু। এ ধরনের ঘটনা প্রতিবছরই ঘটে। বর্ষা এলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। নগরের অরক্ষিত নালা আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাঝে হারিয়ে যায় অমূল্য প্রাণ। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে বৃষ্টির মধ্যে খোলা নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ। দীর্ঘ সময় উদ্ধার অভিযান চালিয়েও তার মরদেহ পাওয়া যায়নি। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর, আগ্রাবাদ এলাকায় হাঁটার সময় নালায় পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। ষোলশহর এলাকায় ২০২২ সালে শিশু কামাল নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়। তিন দিন পর মুরাদপুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট আগ্রাবাদ রঙ্গীপাড়া এলাকায় দেড় বছর বয়সী শিশু ইয়াছিন আরাফাত নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ১৬ ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। ২০২৪ সালের জুনে গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় সাত বছরের শিশু সাইদুল ইসলাম নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন নাছির খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন:  একটি প্রতিষ্ঠান একটি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে

এবার মায়ের চোখের সামনে চট্টগ্রামের নালায় হারিয়ে গেল ছয় মাসের শিশুটি। নিখোঁজ শিশুটি সেহলিজের মা সালমা বেগম জানান, তারা কাপাসগোলায় এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে অটোরিকশা ঘোরাতে গিয়ে সেটি খালের মধ্যে পড়ে যায়। জলাবদ্ধতা নিরসনের চলমান প্রকল্পের কারণে নালার পাশের নিরাপত্তাবেষ্টনী খুলে রাখা হয়েছিল। এ সময় চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নালায় পড়ে যায়। অটোরিকশায় ছিল শিশুটির মা ও দাদি। স্থানীয়দের সহায়তায় তারা দুজন নালা থেকে উঠতে পারলেও ছয় মাস বয়সী শিশুটি ভেসে গেছে পানির স্রোতে। ঘটনার পরপরই অটোরিকশাচালক পালিয়ে যান।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। তাদের সঙ্গে কাজ করে সিভিল ডিফেন্স ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। কিন্তু রাত দুইটায় নিখোঁজের ৬ ঘণ্টা পরও শিশুটির কোনো খোঁজ পায়নি ডুবুরিরা।

আরও পড়ুন:  শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডে শাস্তির ব্যবস্থা করা: প্রধানমন্ত্রী

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার আবুল ফজল জানান, খালটি ‘হিজড়া খাল’ নামে পরিচিত। সেখানে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকায় পানির স্রোত আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *