যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে জোরপূর্বক যুদ্ধে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী উভয় পক্ষই রোহিঙ্গা যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা গোপনে অস্ত্র চালনা ও যুদ্ধকৌশলের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট।

১৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ রিয়াসের জীবন বদলে গেছে গত বছরের ডিসেম্বরে। পরীক্ষার দিনে স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে পালাতে হয়েছে বাড়ি থেকে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মি উভয়ই রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে সেনাদলে ভর্তি করছে।

রিয়াস বলেন, আমাদের লক্ষ্য জান্তা বাহিনী ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিহত করে নিজেদের ভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। আগে শুধু জান্তার সঙ্গে লড়াই করার চিন্তা ছিল, এখন প্রয়োজনে আরকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধেও আমরা অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত।

বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টকে জানান, গোপন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রথমে ফিটনেস ট্রেনিং দেওয়া হয়। এরপর তাদের কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্র চালনা শেখেন। এছাড়া মার্শাল আর্টও শেখানো হয় ক্যাম্পে। অবশ্য এসব অস্ত্র কোথা থেকে আসে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। আরেকটি দল সোশ্যাল মিডিয়া, কাউন্টার সারভেইলেন্স ও শত্রুদের অবস্থান শনাক্ত করার কৌশল শেখেন।

আরও পড়ুন:  শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা

এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য শান্তিতে ও সব অধিকার নিয়ে নিজ দেশে বসবাসের অধিকার ফিরে পাওয়া। সরকার ও বিদ্রোহীরা উভয়ই আমাদের ভূমি দখল করেছে।এখন আমরা আমাদের মাতৃভূমি ফিরে পেতে চাই ও আমরা এর জন্য লড়াই করব।

কোন গ্রুপের অধীনে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি রিয়াস। তিনি বলেন, ১ হাজারের বেশি লোক এখন প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছেন। সব শিবির থেকেই এই প্রশিক্ষণে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

ইসলামিক মাহাজ নামের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত এক রোহিঙ্গা নাগরিক ইনডিপেনডেন্টকে জানান, তারাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এই ইসলামিক মাহাজটি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) একটি অঙ্গ সংগঠন।

সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট বলছে, বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডজনখানেক সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বেশ কয়েকবার এ নিয়ে উদ্বেগও জানানো হয়।

আরও পড়ুন:  আমিরাতে সাধারণ ক্ষমা পেয়েছেন ৫০ হাজার বাংলাদেশি

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এসব গোষ্ঠী মাদক, মানবপাচার, হত্যা, চাঁদাবাজি ও ক্যাম্পের অন্তর্কোন্দলের সঙ্গে যুক্ত। এ তালিকায় রয়েছে ইসলামিক মাহাজ, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) ও আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলছেন, তারা বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম তদন্ত করে আসছেন। যে শিবিরগুলোতে স্বেচ্ছায় ও জোরপূর্বক নিয়োগ চলছে সেখান থেকে সাক্ষ্য, ভিডিও ও অডিও প্রমাণ সংগ্রহ করছেন।

জন কুইনলি বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গা জনগণের জীবনের প্রতিটি দিকই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, অনেক রোহিঙ্গা সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়কে মুক্ত করার চেষ্টা করছে।

ফোর্টিফাই রাইটসের প্রতিবেদন অনুসারে, এ নিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত একটি মানবিক সমন্বয় গোষ্ঠীর একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, গত বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার লোককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রশিক্ষণের জন্য।

আরও পড়ুন:  রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমছে না, জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ ডলার

দ্য ইনডিপেনডেন্ট এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অফিসের মন্তব্য চেয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েও মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করে তারা। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই সাড়া মেলেনি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সহায়তা সংস্থা ক্যাফোডের বাংলাদেশ সমন্বয়ক ফিল টালম্যান বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকটে এগিয়ে আসতে হবে।

কারিতাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান আলেকজান্ডার ত্রিপুরা বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমরা ১৭ লাখ শরণার্থীকে সহায়তা দিচ্ছি। কিন্তু তাদের জন্য আরও সাহায্য প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *