রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, এশার আজানের পর থেকেই অন্যান্য দিনের তুলনায় মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় বেশি। অনেক এলাকায় মসজিদে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।
শবেকদর শব্দটি মূলত বাংলা ভাষায় এসেছে ফারসি থেকে। আরবি শব্দ লাইলাতুল কদরের নানা মহিমা কোরআন এবং হাদিসে বর্ণিত আছে।
এ প্রসঙ্গে উত্তর বাড্ডা জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা আজহারউদ্দীন বলেন, ‘শহরের মানুষের আলাদা করে কোরআন পড়া কিংবা শোনার সময় হয় না। এজন্য অনেকেই কোরআন খতমের বড় একটি মাধ্যম হিসেবে খতমে তারাবিকে বেছে নেন। কদরের রাতে কোরআন খতমের পাশাপাশি যারা কোরআন পড়িয়েছেন সেইসব হাফেজদেরকেও আলাদা করে হাদিয়া দেওয়া হয়। মূলত গোটা রমজানের পূর্ণতা আসে এই কদরের রাতকে কেন্দ্র করেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এশা এবং তারাবির পর কদরের রাতের জন্য আলাদা করে কোনো নামাজ না থাকলেও মুসল্লিরা সারারাত নফল নামাজ এবং জিকির-আজকারের মাধ্যমে ইবাদত করেন। কেননা রমজানে নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমান। এ ছাড়া কোরআন তেলাওয়াত এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে কাটে এই রাত। শেষ রাতে মসজিদে মসজিদে আয়োজন করা হয় বিশেষ মোনাজাতের। আল্লাহর কাছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি এবং পাপের ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি দেশ-জাতি এবং সামস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।’
কদরের রাতকে কেন্দ্র করে মসজিদের সামনে অসহায় এবং ভিক্ষুকদের লাইন থাকে চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন কয়েকগুণ বেশি আয় হয় বলে জানান তারা। দক্ষিণ বাড্ডা কুয়েত-বাংলাদেশ জামে মসজিদের সামনে ভিক্ষারত এক নারী সালমা বলেন, ‘এদিন কয়েক হাজার টাকা আয় হয়। ঈদে পরিবারকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া, বাচ্চাদের সামান্য শখ আহ্লাদ পূরণের টাকা আসে এই কদরের রাতেই।’
আরেক ভিক্ষুক মনির বলেন, সারারাত মসজিদের সামনে ভিক্ষা করেন তিনি। অনেক মুসল্লি এশার নামাজের পর মসজিদে যান এবং সেহরির আগে আগে বের হোন। এসময় তারা হাত খুলে দান খয়রাত করেন বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া কদরের রাতকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রিও অনেক বেড়ে যায় বলে জানান বিক্রেতারা। বিশেষ করে আতর, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক এবং সুরমার মতো সুন্নতি সামগ্রীতে ক্রেতাদের আলাদা আগ্রহ থাকে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সামনে এসব পণ্য বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সারা বছর আতর-টুপি বিক্রি হলেও কদরের রাতে বিকাল থেকেই মেসওয়াক, সুরমা, তসবিহ বিক্রি বেড়ে যায়। অনেকে আবার নতুন জায়নামাজ কেনেন।’ মহামান্বিত এ রাতে তারা নতুন করে ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন শুরু করতে উদ্যোমী হন বলে জানান তিনি।
এদিকে কদরের রাতে মসজিদের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতেও চলে ইবাদাত। নারীরা নামাজ এবং কোরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে পার করেন এ রাত।
রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার গৃহিণী জেসমিন আক্তার লিপি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই চলে কদরের রাতে ইবাদতের প্রস্তুতি। এশার আগে সব কাজ গুছিয়ে বাসার নারী এবং শিশুরা ইবাদতে শামিল হোন। রাতের খাবার শেষে অনেকেই সেহরি পর্যন্ত ধাপে ধাপে নফল নামাজ পড়েন এবং কোরআন তেলাওয়াত করেন।’
মুসলমানদের জীবনে কদরের রাত আসে ক্ষমার বার্তা নিয়ে। ‘আল্লাহুম্মা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফুআন্নি’ এই দোয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। সব মিলিয়ে এই রাত রমজানকে করে তোলে আরো মহামান্বিত। পাশাপাশি এই রাতের শিক্ষা থেকে একজন মুসমান নতুন করে ভালো মানুষ হবার যাত্রা শুরু করতে পারে বলে মনে করেন আলেম-ওলামারা।