গাজায় ৫০ হাজার ছাড়াল মৃত্যু

অবরুদ্ধ গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরাইল। ১৮ মার্চ থেকে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে দেশটির বর্বর সেনাবাহিনী। শুধু বেসামরিক স্থাপনাই নয়, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু শিবিরেও বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। রোববার সকালে রাফাহ এবং খান ইউনিসের কয়েকটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে ভয়ংকর বিমান হামলা চালানো হয়। স্থল অভিযান তো চলছেই, ভোরের আলো ফোটার আগেই বিমান হামলায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহর। দিনের বেলায় শুরু হয় স্থল অভিযান, ইসরাইল থেকে ছোড়া হয় কামানের গোলা।

গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার পর্যন্ত) ৪১ জন নিহত ও ৬১ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ মাসের যুদ্ধে গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০,০২১ জনে (রাত ৯টা পর্যন্ত, সংখ্যা আরও বাড়বে)। আহত হয়েছেন ১,১৩,২৭৪ জন। রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিন দুপুরে রাফাহর একাংশ (তেল আল-সুলতান এলাকা) খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আতঙ্কে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পৈতৃক বসতবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন অসহায় স্থানীয়রা। কিন্তু পালানোর পথেও রেহাই নেই—ওঁত পেতে আছে ইসরাইলি ড্রোন। বারবার চক্কর দিচ্ছে মাথার ওপর, ছুড়ছে বোমা।

আরও পড়ুন:  সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ২০ রিসোর্ট পুড়ে ছাই

ইসরাইলের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় আরও সৈন্য পাঠাবে তেল আবিব। প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।’ এমন পরিস্থিতিতে গাজায় আরও তীব্র হয়ে উঠেছে মানবিক সংকট। গত ২৪ দিন ধরে জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তাও পাচ্ছে না ফিলিস্তিনিরা।

খাবারের সন্ধানে কষ্ট করা এমনই এক হতভাগা, উত্তর গাজায় নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা সাইদ আবু আল-জিদিয়ান বলেন, ‘ক্রসিংগুলো বন্ধ, আর যুদ্ধের শুরু থেকেই আমার বেতন স্থগিত করা হয়েছে… গাজায় কোনো খাবার নেই।’

এমন অমানবিক সময়েও ইসরাইলি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে শনিবার রাতে গাজার খান ইউনিসে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর এক শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে। নিহত ওই নেতার নাম সালাহ আল-বারদাউইল। তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ছিলেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার এক তাঁবুতে স্ত্রীসহ নিহত হন তিনি।

আরও পড়ুন:  সেনাদের ফেরত নিতে সম্মত মিয়ানমার, প্রক্রিয়া চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য হামাস প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত। ফিলিস্তিনি আন্দোলনের প্রতিনিধিরা শনিবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে আঙ্কারায় এক বৈঠকে এ কথা জানান।

কায়রো থেকে বার্তা সংস্থা তাস জানায়, হামাস প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মনে করেন, ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলা জরুরি। তুরস্কের রাজধানীতে আলোচনার পর হামাসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হামাস প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জোর দিয়ে বলেছেন, তারা মনে করেন ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলা জরুরি।’

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ শনিবার হামাসকে গাজার ফিলিস্তিনিদের ‘অস্তিত্ব’ রক্ষা করতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আরব নিউজ সূত্রে জানা গেছে, ফাতাহর মুখপাত্র মন্থির আল-হায়েক গাজা থেকে এএফপিকে পাঠানো এক বার্তায় বলেছেন, ‘হামাসকে গাজার জনগণ, শিশু, নারী এবং পুরুষদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হামাসকে শাসন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে এবং মেনে নিতে হবে যে, যদি তারা গাজায় ক্ষমতায় থাকে, তবে এই যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বের অবসান ঘটাবে।’

আরও পড়ুন:  কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা নেই

তবে হামাস নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার বলেন, তিনি মনে করেন, হামাস ‘মতাদর্শগতভাবে একগুঁয়ে নয়’, এবং সংলাপের মাধ্যমে এই সংকট সমাধান সম্ভব।

তিনি আরও যুক্তি দেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘ভালো উদ্দেশ্যে’ কাজ করছেন। তিনি এমন এক পরিস্থিতিতে কাজ করছেন, যেখানে ইসরাইলি জনমত হামাসকে ধ্বংস করার চেয়ে গাজায় আটক অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্ত করার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *