ক্লিওপেট্রা, ক্ষমতা ও রহস্যের রানি

ক্লিওপেট্রা, নামটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন রহস্যময়, বুদ্ধিমতী ও শক্তিশালী নারীর প্রতিচ্ছবি। তিনি শুধু মিশরের রানি ছিলেন না, ছিলেন এক কৌশলী কূটনীতিক, দক্ষ শাসক ও ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী নারী।উত্থান ও ক্ষমতা

ক্লিওপেট্রার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৬৯ সালে। তখন মিশরে টলেমিক রাজবংশের শাসন চলছিল।

রাজপরিবারটি ছিল গ্রিক বংশোদ্ভূত কিন্তু ক্লিওপেট্রা ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি মিশরীয় ভাষা শেখেন এবং নিজেকে প্রকৃত মিশরীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার বাবার মৃত্যুর পরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি তার ছোট ভাই টলেমি অষ্টমের সঙ্গে রাজত্ব শুরু করেন। ভাইয়ের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে ক্লিওপেট্রাকে নির্বাসনে যেতে হয়।
জুলিয়াস সিজার ও ক্ষমতা পুনরুদ্ধারক্লিওপেট্রা বুঝতে পারেন, রোমান সাম্রাজ্যের সহায়তা ছাড়া তিনি তার সিংহাসন ফিরে পাবেন না। তাই তিনি কৌশল অবলম্বন করেন। একজন দাসীর মতো নিজেকে গুটিয়ে একটি কার্পেটে মুড়ে রোমান সেনাপতি জুলিয়াস সিজারের সামনে হাজির হন। তাঁর বুদ্ধিমত্তা, সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে সিজার তাকে সাহায্য করেন।

আরও পড়ুন:  সারা দেশে শ্রদ্ধার ফুলে বীরদের স্মরণ
ক্লিওপেট্রা পুনরায় মিশরের রানির আসন ফিরে পান।মার্ক অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রার প্রেমকাহিনিসিজারের মৃত্যুর পর ক্লিওপেট্রা মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অ্যান্টনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী রোমান সেনাপতি। তাঁরা প্রেমে পড়েন এবং একসঙ্গে রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে শক্তি গঠনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এই সম্পর্ক রোমের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে।

যার ফলে অগাস্টাস (অক্টাভিয়ান) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।শেষ পরিণতিখ্রিস্টপূর্ব ৩১ সালে অক্টাভিয়ান ও অ্যান্টনির মধ্যে সংঘটিত অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধে অ্যান্টনি পরাজিত হন। পরবর্তীতে অ্যান্টনি আত্মহত্যা করেন। ক্লিওপেট্রা পরাজয়ের শোক ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সহ্য করতে না পেরে কিংবদন্তি মতে বিষধর সাপের কামড়ে আত্মহত্যা করেন। কথিত আছে এই সাপ তার কাছে ডুমুরের ঝুড়িতে লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকের মতে, তিনি আত্মহত্যা করেননি বরং খুন হয়েছিলেন। ইতিহাসবিদদের মতামত ভিন্ন হলেও তাঁর যে করুণ পরিণতি হয়েছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার মৃত্যু দিয়ে মিশরের স্বাধীন রাজত্বেরও সমাপ্তি ঘটে এবং এটি রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:  ১১০তম ব্যক্তি হিসেবে পবিত্র কাবাঘরের চাবি পেলেন যিনি

কেন তিনি আজো গুরুত্বপূর্ণ?

ক্লিওপেট্রা শুধু তার সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত নন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন বুদ্ধিমান কৌশলী, বহু ভাষাবিদ এবং দক্ষ শাসক। তার জীবন ও প্রেমকাহিনি যুগে যুগে সাহিত্য, নাটক ও সিনেমায় স্থান পেয়েছে। শেক্সপিয়রের নাটক ‘অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা’ থেকে শুরু করে আধুনিক হলিউডের সিনেমা সব জায়গায় তিনি এক রহস্যময় ও শক্তিশালী নারী হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন।

সূত্র : হিস্টোরি হিট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *