আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেন। ঢাকার রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর এ ঘোষণার পর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়। এতে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এক পর্যায়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হলে বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকায় ও ৩ মার্চ সারাদেশে হরতালের ডাক দেন। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের বিশাল সমাবেশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। সেখানেই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেওয়ার কথা জানান।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে আগ্রহী আমিরাত
২৫০০ বছরের ৪১টি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণের একটি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত।
ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ড. জ্যাকব এফ. ফিল্ড কর্তৃক সম্পাদিত ও ২০১৩ সালে প্রকাশিত We shall Fight on the Beaches : The Speeches that Inspired History গ্রন্থে সংকলিত আড়াই হাজার বছরের ৪১টি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণের একটি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ড. জ্যাকব ‘The Struggle this Time is the Struggle for Independence’ শিরোনামে ভাষণের মূল বক্তব্য ও মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত দিকনির্দেশনাসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আপসহীন ভূমিকা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থে খ্রিস্টপূর্বকালের দিগ্বিজয়ী সমরনায়ক আলেকজান্ডার দি গ্রেট থেকে শুরু করে আধুনিককালের বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিক অ্যাব্রাহাম লিঙ্কন, ভ্লাদিমির লেনিন, উইনস্টন চার্চিল, শার্ল দ্য গল, মাও সেতুং, হো চি মিন, সালভাদর আলেন্দে প্রমুখের কালজয়ী ভাষণের সঙ্গে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।বইটির বেশিরভাগ ভাষণই ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও লিখিত।
# ১৮৬৩ সালের আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস’, নামে ২৭২ শব্দের দুই মিনিটের লিখিত ভাষণটি ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সামনে দেওয়া হয়েছিল।
#১৯৬৩ সালের মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ অ্য ড্রিম’, নামের ১৬৬৬ শব্দের ১৭ মিনিটের লিখিত ভাষণটি প্রায় দুই লাখ মানুষের সামনে দেওয়া হয়েছিল।
#১৯৪০ সালের উইনস্টন চার্চিলের ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’, নামে পরিচিত ৩৭৬৮ শব্দের ১২ মিনিটের ভাষণটি ৬০০ মানুষের সামনে দেওয়া হয়েছিল।
#১৯৪৭ সালের জওহরলাল নেহেরুর ‘অ্যা ট্রাইস্ট উইথ ডেস্টিনি’, নামে পরিচিত ৭৫৫ শব্দের পাঁচ মিনিটের ভাষণটি ৫০০ মানুষের সামনে দেওয়া হয়েছিল।
# অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল অলিখিত এবং কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতিবিহীন। সামনে ছিল স্বাধীনতার স্বাদ পেতে মরিয়া ১০ লাখ বাঙালি। ১০৯৫টি বজ্রকঠিন শব্দে তৈরি ১৮ মিনিটের ভাষণটি ছিল সত্যিকার অর্থেই বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *