মহিমান্বিত রমজানের আগমনে রাসুলুল্লাহ (সা.) খুবই আনন্দিত হতেন এবং আল্লাহর দরবারে সর্বদা দোয়া করতেন, যেন তিনি এই মহিমান্বিত মাসের বরকত লাভের সুযোগ দেন। তিনি শাবান মাসে বেশি পরিমাণে রোজা রাখতেন, যেন রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) একাধারে (এত বেশি) রোজা রাখতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর রোজা পরিত্যাগ করবেন না। (আবার কখনো এত বেশি) রোজা না রাখা অবস্থায় একাধারে কাটাতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর (নফল) রোজা রাখবেন না। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো পুরো মাসের রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি (নফল) রোজা পালন করতে দেখিনি।
নবীজি (সা.)-এর রমজানের জীবনধারা
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে অতুলনীয়ভাবে উদারতা ও দানশীলতার পরিচয় দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন : আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন, যখন জিবরিল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরিল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা একে অন্যকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল (সা.) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও বেশি দানশীল ছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)
রমজানের শেষ ১০ দিনে নবীজি (সা.) ইতিকাফে বসতেন এবং নিজেকে আরো বেশি ইবাদতে নিয়োজিত করতেন। তিনি এই দিনগুলোতে বিশেষভাবে লাইলাতুল কদর খোঁজার চেষ্টা করতেন। উম্মুল মুমিমিন আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন : তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২০)
সুতরাং নবীজি (সা.) রমজান মাসকে শুধু রোজার মাস হিসেবে দেখেননি, বরং এটি ছিল তাঁর জন্য ইবাদত, উদারতা, কোরআন তিলাওয়াত ও আত্মশুদ্ধির একটি সুবর্ণ সুযোগ। তিনি নিজে যেমন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতেন, তেমনি উম্মতকেও অনুপ্রাণিত করতেন, যাতে তারা রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার ও রমজানে পূর্ণ উদ্যমে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।