অশ্রুসিক্ত আখেরি মোনাজাতে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি

অসীম অনন্ত প্রেমময় আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ ও অশ্রুসিক্ত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা। পবিত্র হজের পর মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার নিজামুদ্দিন মারকাজের (সাদপন্থী) তত্ত্বাবধানে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব তথা ৫৮তম আসর ছিল এটি।

ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্ব পাশের মঞ্চ থেকে লাখো মানুষের কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বিশিষ্ট বুজুর্গ, আলেমে দ্বিন মাওলানা সাদের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিট থেকে শুরু করে ১টা ৭ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন আখেরি মোনাজাতে সমগ্র বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, মুক্তি, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করে, বিভেদ ভুলে ঐক্যের আহ্বানে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কাকুতি-মিনতি জানানো হয়।

আরও পড়ুন:  জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই : প্রেস সচিব
‘আমিন, আলাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় টঙ্গীর আকাশ-বাতাস। রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের কয়েক লক্ষাধিক মুসল্লি ছাড়াও ইজতেমা ময়দানে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের ৬৪টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৫৮৪ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান।

মোনাজাতে অযুত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে, রাহমানুর রাহিম আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। সবাই যেন কিছু সময়ের জন্য আল্লাহর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে ভুলে গিয়েছিল হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদ।

আমির-ফকির, মনীব-ভৃত্য, ধনী-গরিব, নেতাকর্মী-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশা ও গোষ্ঠীর মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দুিই হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।বিশাল জনসমুদ্র থেকে মধ্যাহ্নের আকাশ কাঁপিয়ে ধ্বনি ওঠে— ‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ’। আখেরি মোনাজাতের সময় মুঠোফোন, বেতার, ওয়্যারলেস সেট, ইলেকট্রনিকস মিডিয়া এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাধে দেশ-বিদেশের আরো লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তুলেছেন ক্ষমাশীল পরওয়ারদিগারের শাহি দরবারে। গুনাহগার, পাপী-তাপী বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন।

আরও পড়ুন:  তাবলীগ জামাতের দুগ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণ কী?
সকাল থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন, সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে লাখ লাখ মুসলমান যেন ভেঙে পড়েছিলেন টঙ্গীতে।  এ ছাড়া হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মা ও বোনেরা এ আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। সবার প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের সঙ্গে মোনাজাতে শরিক হয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

এদিকে মোনাজাত চলাকালে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের আশপাশে মহাসড়ক খোলা থাকলেও টঙ্গী-কামারপাড়া সড়ক বন্ধ ছিল। রাস্তায় ফুটপাতে ও ডিভাইডারে মুসল্লিরা মোনাজাত করায় এই রোডে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান : 

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের আখেরি মোনাজাতে ড্রোন দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট আতঙ্কের ঘটনা ও দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইজতেমায় হামলার হুমকি দেওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। মোনাজাত চলাকালে আকাশে হেলিকপ্টার টহল দেয়।

আরও পড়ুন:  চট্টগ্রামে নববর্ষের শোভাযাত্রা, সিআরবিতে নেই কাঙ্ক্ষিত দর্শক

উল্লেখ্য, ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের প্রথম পর্বের দুই ধাপে ইজতেমা সম্পন্ন হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেন। আজ রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় পর্ব তথা বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *