বাংলাদেশ ইস্যু আমি মোদির ওপরই ছেড়ে দেবো: ডোনাল্ড ট্রাম্প

হোয়াইট হাউজে নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ঠিক পরেই সাংবাদিক সম্মেলনে এক ভারতীয় সাংবাদিকের কাছ থেকে প্রশ্নটা ধেয়ে আসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে!

তিনি জানতে চান, ‘আমরা জানি বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন ডিপ স্টেট জড়িত ছিল, সম্প্রতি মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জুনিয়র সোরোসের (জর্জ সোরোসের ছেলে) বৈঠকেও তা প্রমাণিত। তো বাংলাদেশ নিয়ে আপনি কী বলবেন?’  

ডোনাল্ড ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না, আমাদের ডিপ স্টেটের এখানে কোনও ভূমিকা ছিল না। (ভারতের) প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টা নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ করছেন…। বস্তুত আমি পড়েছি (ভারত) এটা নিয়ে শত শত বছর ধরে কাজ করছে।’

‘কাজেই বাংলাদেশের বিষয়টি আমি (ভারতের) প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ছেড়ে দেবো’, পাশে বসা নরেন্দ্র মোদির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন মি. ট্রাম্প।

আরও পড়ুন:  ট্রাম্পের কর প্রস্তাব আটকে দিলেন ৫ রিপাবলিকান, প্রাথমিকেই বড় ধাক্কা

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারতই যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও নির্ণায়ক শক্তি এবং বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে এখনকার আমেরিকা যে ভারতকে ডিঙিয়ে কোনও ধরনের সক্রিয়তা বা হস্তক্ষেপ দেখাতে চাইবে না, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে এভাবেই ব্যাখ্যা করছেন দিল্লির কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমেরিকার শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে এতটা আশাব্যঞ্জক বার্তা ভারতও এই প্রথম পেলো!

অথচ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় আদৌ আসবে কিনা, শেষ মুহূর্তে তা নিয়েও সংশয় ছিল। আর তার কারণ ট্রাম্পের ‘ট্যারিফ যুদ্ধ’!

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে হোয়াইট হাউজে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের ঠিক ঘণ্টা খানেক আগেই তার সবশেষ বোমাটা ফাটান ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যেসব দেশ আমেরিকার পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক বসায়, তাদের সবার ওপর ঠিক সেই হারে পাল্টা শুল্ক বা ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বসানো হবে বলেও ঘোষণা করেন ট্রাম্প। আর সেই তালিকার সবার ওপরে যে ভারত থাকবে, তার কথায় ‘ইন্ডিয়া অ্যাট টপ অব দ্য প্যাক’ – সেটাও কোনও রাখঢাক না করেই জানিয়ে দেন।

আরও পড়ুন:  সংরক্ষিত নারী আসন : আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ৪৮, জাপা ২

ভারতের জন্য চরম অস্বস্তিকর এরকম একটা ঘোষণার পর ধারণা করা হয়েছিল দুই নেতার মধ্যে শীর্ষ বৈঠকে ট্যারিফ প্রসঙ্গই আলোচনার সিংহভাগজুড়ে থাকবে এবং বাংলাদেশের মতো ‘পারিপার্শ্বিক ইস্যু’ হয়তো আড়ালে চলে যাবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটা হয়নি, বরং বিশদে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশ নিয়েও।

বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ওয়াশিংটন ডিসিতে যে সাংবাদিক বৈঠক করেন, তাতেও তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভারতের একটি শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, ভারত যে তাদের ঘরের পাশে একটি ‘শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ’ বাংলাদেশ দেখতে চায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সেটাই জানানো হয়েছে এবং তিনিও এই নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদি আলাদা আলাদা বৈঠক করেন মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড এবং আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) মাইক ওয়ালজের সঙ্গেও। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *