আদানির কাছ থেকে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ চেয়েছে বাংলাদেশ

গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। খবর রয়টার্সের।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গোষ্ঠীর কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। নভেম্বর থেকে একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ। এখন আবার দুটি ইউনিট থেকেই উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম ছিল। এ ছাড়া বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ নিয়ে বিরোধের কারণে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছিল। সরবরাহ এখন আগের পর্যায়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে ২১৭ সালে আদানির সঙ্গে ক্রয় চুক্তি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারে নির্মিত ওই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর কিনবে বাংলাদেশ। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে।

আরও পড়ুন:  ১৪ মাস পর জ্ঞান ফিরেছে কুমার বিশ্বজিতের ছেলের

রয়টার্স বলেছে, বাংলাদেশ ডলার–সংকটে আছে। সে কারণে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারায় গত ৩১ অক্টোবর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামে। এরপর শীতে চাহিদা কম থাকায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও অর্ধেক (একটি ইউনিট থেকে) বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রয়টার্সকে জানায়, তারা আদানির কোম্পানিকে মাসে ৮৫ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার করে পরিশোধ করছে। এখন চাহিদা বাড়ায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে বলেছে।

বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের বর্তমান চাহিদা অনুসারে দ্বিতীয় ইউনিটটি চালুর পরিকল্পনা করেছিল আদানির প্রতিষ্ঠান। তবে উচ্চ কম্পন ও কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি।’

রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা মাসে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিচ্ছি। আমরা আরও বেশি অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বকেয়া কমিয়ে আনা। ফলে এখন আদানির সঙ্গে কোনো বড় সমস্যা নেই।’

আরও পড়ুন:  ভারত থেকে এলো আরও ১৯ লাখ কেজি আলু

আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের আহ্বানে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি। যদিও গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল, বিপিডিবির কাছে তাদের প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ডলার বাকি আছে। ওই সময় বিপিডিবি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, এই বকেয়ার পরিমাণ ৬৫ কোটি ডলার।

বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে আদানির সঙ্গে বিরোধ আছে বাংলাদেশের। রয়টার্সের হিসাবে, অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুতের চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি অর্থে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।

এদিকে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। ওই কমিটির প্রতিবেদন এ মাসে সামনে আসতে পারে। তখন আদানির সঙ্গে চুক্তিটি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানায় রয়টার্স।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যান হাসিনা। এরপর গত সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার সময়ে স্বাক্ষরিত প্রধান জ্বালানি চুক্তিগুলো পরীক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্যানেল নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার।

আরও পড়ুন:  বদলি, শৃঙ্খলা ও নিয়োগে উচ্চপর্যায়ের ৩ কমিটি

অন্যদিকে আদানির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তোলে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বলা হয়, ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য আদানি দিল্লি থেকে যে কর–সুবিধা পেয়েছিল, তা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়নি। গত ডিসেম্বরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এরপর বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা চুক্তিটি পর্যালোচনা করছেন। যদিও আদানির একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সব দায়বদ্ধতা পালন করেছে। বাংলাদেশ চুক্তিটি পর্যালোচনা করছে, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

দুই পক্ষের বিরোধ মিটমাট হয়েছে কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *