অভাবের সময় প্রিয় কন্যাকে মহানবী (সা.)-এর উপদেশ

রাসুল (সা.)-এর আদরের দুলালি ফাতিমা (রা.)-এর জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাদাসিধা। রাসুল (সা.) তাঁর এই মেয়েকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি জান্নাতে নারীদের নেতা হবেন। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফাতিমা আমার জীবনের একটি অংশ।

যে ফাতিমাকে ক্রোধান্বিত করবে সে আমাকেই ক্রোধান্বিত করবে; অথবা যে তাকে কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৮৬৯)এত মর্যাদার অধিকারী হয়েও তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। নিজেই ঘরের সব কাজ করতেন। তাঁর ঘরে কোনো খাদেম বা সেবক ছিল না।

নিজেই খামিরা তৈরি করে রুটি বানাতেন। মাদুর বিছিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকতেন। তাঁর ত্যাগী জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ।আলী (রা.) বলেন, একদা ফাতিমা (রা.) তাঁর কাছে আটা পিষার কষ্টের কথা জানান।

তখন তাঁর কাছে সংবাদ পৌঁছে যে রাসুল (সা.)-এর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দি আনা হয়েছে। ফাতিমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন একজন সেবক বা সেবিকা চাইতে; কিন্তু তিনি রাসুল (সা.)-কে পেলেন না। তখন তিনি আয়েশা (রা.)-কে বিষয়টি জানিয়ে গেলেন। রাসুল (সা.) এলে আয়েশা (রা.) তাঁকে বিষয়টি বললেন। আলী (রা.) বলেন, এরপর রাসুল (সা.) আমাদের কাছে এলেন।
তখন আমরা শুয়ে পড়েছিলাম। আমরা উঠতে চাইলাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাকো। আমি তাঁর পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা যা চেয়েছ, আমি কি তোমাদেরকে তার চেয়ে উত্তম জিনিসের সন্ধান দেব না? যখন তোমরা বিছানায় যাবে, তখন ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবর’ ৩৩ বার ‘আলহামদু লিল্লাহ ’এবং ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, এটাই তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম, যা তোমরা চেয়েছ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩১৮)হাদিসের শিক্ষা : এ হাদিস মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হলো—

আরও পড়ুন:  চাঁদ দেখা গেছে, ঈদুল আজহা ৭ জুন

১. ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ, আমি কি তোমাদেরকে তার চেয়ে উত্তম জিনিসের সন্ধান দেব না?’ এ থেকে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি জিকিরের সঙ্গে লেগে থাকে কিংবা নিজেকে জিকিরের ওপর অভ্যস্ত করে তোলে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ শক্তি প্রদান করা হয়, যা তার পক্ষ থেকে খাদেমের বা সেবকের কাজের জন্য যথেষ্ট হয়। অথবা এটি তার কাজকে সহজ করে দেয়।

২. যে ব্যক্তি সব সময় জিকিরের সঙ্গে লেগে থাকে দুনিয়াবি কষ্ট-দুর্দশা তাকে পরাজিত করতে পারে না। কারণ ফাতিমা (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে কষ্টের কথা বলেছেন। ঘরের কাজ করতে তিনি যে কষ্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ব্যাপারটি তিনি রাসুল (সা.)-কে জানিয়েছেন। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে জিকিরে উদ্বুদ্ধ করেন। আর জিকিরের একটি উপকারিতা হলো—এটি শরীরকে শক্তিশালী করে।

আরও পড়ুন:  কবর জিয়ারতকালে রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন

৩. যখন একাধিক প্রয়োজন সামনে চলে আসে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম!  আমি আহলে সুফফা সাহাবিদের না দিয়ে তোমাদেরকে (সেবক) দেব—এটা কখনো হতে পারে না’। এখানে রাসুল (সা.) আহলে সুফফার প্রয়োজন বা চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

৪. পিতার কাছে সন্তানের কষ্টের কথা বলা যাবে। কখনো মেয়ে যদি মা-বাবার কাছে ঘরের কাজের কষ্টের কথা কিংবা সন্তান লালন-পালনের কষ্ট ইত্যাদির কথা বললে তখন মা-বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানকে নসিহত করা। তাদের কষ্টে সহমর্মিতা প্রকাশ করা। এখানে রাসুল (সা.) এ কাজই করেছেন। তিনি ফাতিমা (রা.)-কে জিকিরের নসিহত করেছেন।

৫. সৎ ভালো সেবক বা কর্মচারীর মাধ্যমে ঘরের কাজে সহযোগিতা নেওয়া যাবে। কেননা ফাতিমা (রা.) যখন রাসুল (সা.)-এর কাছে খাদেম চেয়েছেন তখন তিনি তা অস্বীকার করেননি।

আরও পড়ুন:  রাতে ঘুম না হলে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন

আল্লাহ তাআলা সবাইকে হাদিস অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *