আ’লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন অন্যায্য

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়। রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর এবং সম্পত্তি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

গত বৃহস্পতিবার সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি এ বিবৃতি দেন। ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করেছেন’ শীর্ষক বিবৃতিতে মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধিবেশনে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব উপস্থাপন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এইচআরডব্লিউ মনে করে, বাংলাদেশে ন্যায়বিচার দেখতে আগ্রহী জনগণের জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা উচিত, যা সহিংসতা ও প্রতিশোধের বদলে একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করবে।

আরও পড়ুন:  ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা শ্রীলংকার মত তাণ্ডব সৃষ্টি করতে চেয়েছিল’

বিবৃতি বলা হয়, তথাকথিত ‘বুলডোজার শোভাযাত্রা’ নামে ঘোষণা দিয়েই হামলা চালানো হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছরের আগস্টে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুমসহ ১৫ বছরের দমন-পীড়নের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে অন্যায্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিল। তাঁর সরকার গণঅভ্যুত্থানে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে। ফলে ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।

এসব কারণে আওয়ামী লীগের সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, তা ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়। বাংলাদেশের আবারও মারাত্মক দমন-পীড়নের দিকে ঝুঁকে পড়া উচিত নয় বলে মনে করে এইচআরডব্লিউ।

আরও পড়ুন:  সৈন্যরা দেশের প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালন করবে: সেনাপ্রধান

৩২ নম্বরে হামলা প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, এমন সময়ে ভাঙচুর হলো, যখন হাসিনা তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে অনলাইনে ভাষণ দিচ্ছিলেন এবং হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের দাবি জোরালো হচ্ছে। কিন্তু হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার আগে ভারত সরকারকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে প্রত্যর্পণের ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে হবে।

বর্তমান সরকারের সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। এ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির জবাবদিহির বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ইউনূসের প্রশাসন ক্ষুব্ধ নাগরিকদের দিক থেকে নানা চাপের মুখে রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী বা গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারের বিক্ষোভের মতো চাপও রয়েছে। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  সাবেক ৯ মন্ত্রী-এমপিসহ ২৬ জনের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা

তবে এ সরকার এখনও সংখ্যালঘু বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিশেষ করে আতঙ্কে থাকা হিন্দুদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। আগের সরকারের আমলে বেআইনিভাবে বিরোধী মতের মানুষকে আটক রাখার স্থানগুলো পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রমাণ ধ্বংস করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *