রাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ দশ বছর নানা সংকট আর ভোগান্তির পরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি)। নানামুখী পদক্ষেপ আর শিক্ষার্থীবান্ধব প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় এখন শিক্ষার্থীদের প্রাণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নবাগত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আতিয়ার রহমানের যুগান্তকারী পদক্ষেপ আর সৃজনশীল চিন্তায় রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। নানামুখী উদ্যোগ আর কর্মপরিকল্পনায় রাবিপ্রবি এখন আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে।
নতুন যোগদান করেই রাবিপ্রবি উপাচার্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সহ জেলা শহরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। সবার দাবি, পরামর্শ ও সমস্যার বিশ্লেষণ করে তিনি রাবিপ্রবিকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন কাপ্তাইলেকের তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সবাই এক নামে চিনবে। এই লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের দশ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাবিপ্রবি উপাচার্য প্রতিদিন যেন নতুন নতুন ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন। যা কেবল আলোড়নই নয় বরং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকেও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশলগত কর্মপন্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ শুরু করা উপাচার্য প্রথমেই মনোযোগ দেন ছাত্র ও ছাত্রীদের আবাসিক হলের দিকে। ডায়ানিং ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা, ইন্টারনেট সেবা, ব্যাংকিং সেবা ও আবাসিক হলের সার্বিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রশাসন প্রধানের কঠোর পদক্ষেপে একে একে বের হয়ে আসতে থাকে নানা সমস্যার কথা। কিছু সমস্যার চটজলদি সমাধানও দিয়ে দেন নবনিযুক্ত উপাচার্য। তার পরিকল্পনায় রাবিপ্রবির আবাসিক হল এখন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য শান্তির নীড়। রাবিপ্রবি ক্যাম্পাস এখন পরিচ্ছন্ন ও দূষণ মুক্ত।
অন্যদিকে দীর্ঘ দিনের জমে থাকা সমস্যা দূর করতে উপাচার্য আগামী বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও ছাত্র—ছাত্রীদের জন্য স্থায়ী হল নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির জটিলতা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়াও মাস্টার প্ল্যানের রিভিউ কমিটি সভা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যাতায়াতের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন চলাচলের অসুবিধা সমূহ চিহ্নিত করণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও ব্যাচেলর প্রোগ্রামে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ডোমেইনে ই-মেইল অ্যাকাউন্ট প্রাপ্তির বিষয় সংযোজন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের প্রস্তাব, প্রথম উপাচার্য প্রফেসর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা শিক্ষাবৃত্তি”নামে একটি বৃত্তি চালুকরণের জন্য আলোচনা সভা, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভা সহ প্রথমবারের মতো স্থানীয় প্রশাসনের অফিস প্রধান, স্থানীয় সাংবাদিক, শ্রেণি প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা, সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা সম্পন্ন করেন।
একমাসের কম সময়ের মধ্যে এসব কাজ দেখে রাবিপ্রবিয়ানদের মাঝে নতুন উদ্দ্যোম তৈরি হয়েছে। নবাগত উপাচার্যকে সমর্থন জানিয়ে তারা প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বসন্ত দেখার অপেক্ষায় গভীর আগ্রহে দিনপাত করছে। দীর্ঘ ১০ বছরের বঞ্চনার স্বীকার হওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ এখন দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকেও জোড় প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নামে অবস্থান করা বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন নিজেদের নতুন ভাবে পরিচয় করে দিতে নানা পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে। ক্লাবগুলোর নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তাধারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানসিক চিন্তাধারা ও স্বপ্নকে উজ্জীবিত করছে।
নতুন উপাচার্য কি তবে প্রায় ৬৪ একরের আলোক বর্তিকা হয়েই এসেছেন? নাকি অন্যদের মতো প্রথমে আলো ছড়িয়ে পরে অন্ধকারে মিলিয়ে যাবেন! সে প্রশ্নের ঘোর লাগা উত্তর সহসায় কাটছে না শিক্ষার্থীদের। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দেখা, শিক্ষক সংকট নিরসন ও শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ না আসা পর্যন্ত হয়ত অপেক্ষার প্রহর গুনতেই হবে রাবিপ্রবিয়ানদের। তবে সব কথা ছাড়িয়ে রাবিপ্রবির বন্ধুর ক্যাম্পাসে সকলেরই চাওয়া কাপ্তাইলেকের পাড়ের বিশ্ববিদ্যালয়কে তলানি অবস্থা থেকে খুব দ্রুতই উপাচার্য হয়ত নিয়ে যাবেন ফুরামন পাহাড়ের চূড়ার উচ্চতায়। তখনই শিক্ষা, সম্প্রীতি, প্রগতির এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃত অর্থেই আলো ছড়াবে সে আশায় প্রতিটি রাবিপ্রবিয়ানরা।