ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ-গাঁদা। সারি সারি বর্ণিল ফুলের সমাহার। যেদিকে চোখ যায়-শুধু রঙের খেলা। চেনা দেশি ফুলের পাশে আছে বিদেশি ফুলের বাহারও। ফুলের এমন জলসায় রঙের মেলায় বিমুগ্ধ দর্শনার্থীরা। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে সাগর পাড়ে গড়ে তোলা ডিসি পার্কে বসেছে ফুলের মেলা, রঙের আসর। পুরো পার্ক সেজেছে নানা রঙের ফুলে। উৎসবে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির দুই লাখ ফুলের মেলা বসছে এবার।
গতকাল বৃহস্পতিবার মাসব্যাপী এ উৎসব শুরু হয়েছে। উৎসবের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন। উদ্বোধনের পরপরই পার্কে ভীড় করতে শুরু করেছেন বিনোদনপ্রেমীরা। পার্কে ফুলের রাজ্যে অন্যরকম এক প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছেন নগরবাসী। শিশু, কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষের পদভারে মুখরিত পার্ক।
১২৭ প্রজাতির ফুলের লক্ষাধিক গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ফুল উৎসব। ‘ফুলের মত আপনি ফোটাও গান’ শিরোনামে আয়োজন করা হয়েছে এ উৎসব। উৎসব চলবে ২৩ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত।
বিগত ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত এখানে প্রথমবারের মতো ফুল উৎসব হয়, যা চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। দ্রæতই জনপ্রিয়তা পায় ১৯৪ একর সরকারি জমিতে গড়ে তোলা ডিসি পার্ক। এরপর থেকে প্রতিবছর এখানে ফুল উৎসবের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। মেলা ছাড়াও এই পার্কে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছেন। জেলা প্রশাসের পর্যটক বাসেও যাত্রীদের নিয়ে আসা হয় পার্কটিতে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত বন্দর-ফৌজদারহাট টোল রোড। সারি সারি ঝাউগাছ আর অসংখ্য ছোট বড় জলাশয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কটি যুক্ত হয়েছে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে। ফৌজদারহাট থেকে এ টোল রোড ধরে কিছুদূর গেলেই ডিসি পার্ক। সাগর উপক‚লীয় এ অঞ্চলের এই বিশাল সরকারি জমি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে দখল করে মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কর্মকাÐ পরিচালনা করে আসছিল একাধিক চক্র।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যে এসব জমি অবৈধ দখলমুক্ত করেন। এক সময়ের মাদকের এই রাজ্যে গড়ে তোলা হয় ডিসি পার্ক। নানা রঙের ফুল আর গাছ দিয়ে সাজানো এ পার্কে এ বছরও ফোটানো হয়েছে টিউলিপ। ফুলের পাশাপাশি উৎসবে থাকছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ১৫টি সাম্পানের প্রদর্শনী, সাম্পান বাইচ, ঘুড়ি উৎসব, পুতুল নাচ, ভায়োলিন শো, চিত্র প্রদর্শনীর মত নানা ধরনের আয়োজন। নানা প্রজাতির ফুলের সঙ্গে এবার বিদেশ থেকে আনা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টিউলিপ বাল্ব (গাছ)। শীত প্রধান দেশের এ ফুলটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এ পার্কে ফোটানো হচ্ছে। পার্কে স্থায়ীভাবে লাগানো ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্যাকেট ভর্তি ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানে ভীড় করছেন। উপভোগ করছেন ফুলের সৌন্দর্য। হাঁসফাঁস নগর জীবনে একটু খানি প্রশান্তি পেতে অনেকে ছুটছেন সেখানে। ফুলের কাছে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসছেন অনেকে। সন্তানদের দেশি-বিদেশি ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ৩০ টাকায় টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করে ফুল উৎসব উপভোগ করতে পারছেন। এবছরের ফুল উৎসব উপভোগ করতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছেন আয়োজকেরা।
জানা গেছে, ফুল উৎসবে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, ম্যাগনলিয়া, চেরি, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়া, কনকাম্বরী, হাইব্রিড জবা, চিলিজবা, হিজল, কৃষ্ণচ‚ড়া, বকুল, পলাশ, শিমুল, করবী, ধানলিলি, নীল পাররুল, নীলকণ্ঠ, রেইনলিলি, গন্ধরাজ, কাঠমল্লিকা, বাসন্তী, লিলিয়াম, জিনিয়া, ইনকা মেরি গোল্ড, ডালিয়াকামিনী, বেলী, দোলনচাঁপা, মাধবীলতাসহ দেশি-বিদেশি ১২৭ প্রজাতির কয়েক লাখ ফুলের সমারোহে সেজেছে ডিসি পার্ক। ফুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক ফুলের পাশে লেখা আছে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত।
এ আয়োজনকে আরও আকর্ষণীয় করতে ফুলের প্রদর্শনীর পাশাপাশি কয়েকটি সেলফি জোন ও পর্যটকদের জন্য থাকছে সাম্পান বাইচের আয়োজন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে থাকবে বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকা প্রদর্শন। ফুলের আসরেই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বইমেলা। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব ও বিভিন্ন খাবারের দোকান। শিশুদের জন্য আছে আলাদা কিডস জোন, দীঘির পানির ওপর নির্মিত কাঠের পুলের রাস্তা, আঁকাবাঁকা সেতু, ছনের ছাউনির গোলঘর, বাদামতলায় চেয়ার-টেবিল, পানিতে প্যাডেলচালিত কায়াকিং। ফুল উৎসবের দিন থেকে হবে ঘুড়ি উৎসব, ফানুস উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব ও ১০০’র বেশি গুণী শিল্পীদের চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকছে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।