৫০ বছর পর প্রকাশ্যে মেজর ডালিম, শেখ মুজিবকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য

প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের লাইভ টকশোতে কথা বলেছেন দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম (বীর বিক্রম)। তিনি মেজর ডালিম হিসেবে পরিচিত। মেজর ডালিম শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুনে জড়িত অভিযোগে অভিযুক্ত। লাইভে ৫০ বছরের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে ‘বিশেষ লাইভে যুক্ত আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর ডালিম (বীর বিক্রম)’ শিরোনামের লাইভে যুক্ত হন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা। ইলিয়াসের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত টকশোটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

টকশোতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ৭৫ এর ১৫ আগস্টের নেপথ্যের ইতিহাস তুলে ধরেন বিদেশে নির্বাসিত আলোচিত এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা।

টকশোর শুরুতে মেজর ডালিম বলেন, দেশবাসীকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-জনতাকে, যারা আংশিক বিজয় অর্জন করেছেন, তাদের লাল শুভেচ্ছা জানাই। বিপ্লব একটি সমাজ যেকোনো রাষ্ট্রে একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেই অর্থে তাদের বিজয় এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তার জন্য আরও সময় প্রয়োজন।

২৪’এর গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের নায়ক ছাত্র-জনতাকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রসারণবাদী-হিন্দুত্ববাদী ভারত যার কবজায় আমরা প্রায় চলে গিয়েছি। সেই অবস্থান থেকে সেই ৭১’এর মতো আরেকটা স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

আরও পড়ুন:  মুজিবের বাড়ি ধ্বংসস্তূপ, উৎসুক জনতার ভিড়

৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরেন।

মেজর ডালিম বলেন, খুবই স্পর্শকাতর প্রশ্ন। নিজের বাদ্য নিজে বাজানো যায় না। প্রথম কথা, ১৫ই আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটার সূত্রপাত হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা কাদের ইন্টারেস্টে হচ্ছে? এটা কি আমাদের ইন্টারেস্টের জন্য হচ্ছে যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করবো। নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করবো।

এই বীর বিক্রম বলেন, যখন সাতদফাতে চুক্তি করে নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিনকে পারমিশন দেওয়া হলো একটা প্রভিশনাল গর্ভমেন্ট গঠন করার। সাতটা ক্লজ পড়ে সাইন করার পর নজরুল ইসলাম ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন যে, আমরা ক্রমান্বয়ে ভারতের একটা করদরাজ্য-অঙ্গরাজ্যে পরিণত হব।

তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব তার জুলুমের মাত্রা এতোটাই তীব্র করেছিল স্বৈরাচারী আচরণের মতো যে, তখন মানুষ রবের কাছে মুক্তি চাচ্ছিল তার জুলুমের অবসানের জন্য।’

আরও পড়ুন:  শুক্রবার বরিশাল সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

মেজর ডালিম বলেন, ‘মুজিব তো মারা যায়নি, মুজিব একটি সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থান তো আর খালি হাতে মার্বেল খেলা না। ওখানে দুই পক্ষ থেকেই গোলাগুলি হয় এবং হতাহত হয় দুইপক্ষেই। যেমন মুজিবের পক্ষের কিছু লোক মারা গেল সেভাবে সেনাঅভ্যুত্থানকারী বিপ্লবীদের পক্ষ থেকেও কিছু লোক প্রাণ হারায়। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু বিপ্লবীরা বিজয়ী হয়ে গেল, তারা ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিলো।’  মেজর ডালিম ও তার স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীতমেজর ডালিম ও তার স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘মুজিবের মৃত্যুর খবর জানার পর আর বাকশালের পতনের খবর জানার পর শহর বন্দর গ্রামের লাখ লাখ মানুষ আনন্দ মিছিল বের করলো। যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা বা দলগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল তারাও জনসমর্থন নিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এভাবেই জনস্বীকৃতি পেয়েছিল ১৫ আগস্টের বৈপ্লবিক সামরিক অভ্যুত্থান।’

২৪ এর বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে মেজর ডালিম বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের বিপ্লবীদের, ছাত্র-জনতার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যদি কোনো রকম অবদান রাখতে পারি, আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ থেকে…তাহলে আমরা সেটা করতে প্রস্তুত। পিছপা হবো না, ইনশাআল্লাহ। আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধা, সালাম এবং বিপ্লবী সালাম, সাথে মন থেকে দোয়া করছি তাদের বিপ্লব যাতে ব্যর্থ না হয়। তারা যাতে বিজয় অর্জন করে সুখী সমৃদ্ধ শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলো তাদের দুর্জ্যেয় ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।’

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশের নবগঠিত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জাতীয় সঙ্গীত ইস্যুতে মেজর ডালিম বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের না হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম বা অন্যান্য স্বনামধন্য দেশীয় কবিদের গান হতে পারত। ভিনদেশী একজন কবির গানকে জাতীয় সঙ্গীত বানানোকে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *