চেরী ব্লোসমস ইন্টার. স্কুলের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

চেরী ব্লোসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। আজ ৫ জানুয়ারি স্কুল প্রাঙ্গনে অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে কেককাটা কর্মসূচির মাধ্যমে স্কুলটির ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।

চেরী ব্লোসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল ড. সালেহা কাদের বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা না, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ভালো মনের মানুষ হওয়া। এই মূলমন্ত্র ধারণ করেই স্কুলটির যাত্রা শুরু করি। জীবনে অনেক অর্থবিত্তের চাকরি করেছি, ব্যবসা ফেলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অবদান রাখতে চেয়েছি। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আমি আগামী দিনের বাংলাদেশের নির্মাতাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চেয়েছি। একজন শিক্ষক হিসেবে এটাই আমার পরম তৃপ্তি।

তিনি আরো বলেন, সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক চিন্তাকে বাহিরে রেখে সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে একটি আদর্শিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে পেরেছি। যার ফলে স্কুলে শিক্ষার পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ করেছি। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য আমরা দেশ ও দেশের বাহিরে পুরস্কার এবং সম্মাননা অর্জন করেছি।

বিশ্বায়নের যুগে শিশুদেরকে যোগ্যবান বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এই প্রতিষ্ঠানটি গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষাকে আনন্দময়ী করার লক্ষ্যে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ধারণ করে জাতীয় দিবস সমূহে বাঙালী সংস্কৃতি চর্চা, আবৃত্তি, সঙ্গীত, ছবি আঁকা এবং হামদ-নাতসহ বিভিন্ন সভা, সেমিনারের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে অবদান রাখার মাধ্যমে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

আরও পড়ুন:  ড. আফসানা আমিন এর জন্মদিন আজ

গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের গান হাসন-লালন, বৈশাখের গান, বৃষ্টি বন্দনার গান, দ্বৈত সংগীত, জারি-সারি, ভাটিয়ালী, পালাগান, পুঁথিপাঠ, চিত্রাঙ্কন শেখানো হয়। যাতে করে শিশুরা বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করতে পারে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রচনা ও ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা, ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন ও আলোচনা সভা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন,মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।

এছাড়া স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিশুদেরকে পাঠদানের পাশাপাশি এমন কি করোনার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যেন প্রভাব না পড়ে সেজন্য অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। স্কুলের নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী গত ১৫ এপ্রিল থেকে লাইভ ক্লাস বিডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শিক্ষকেরা বাড়িতে বসে প্লে গ্রুপ থেকে আইজিএসই, আইএএল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে সরাসরি ক্লাস করছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ক্লাস রুটিন অনুযায়ী কাব-স্কাউটিং, নাচ, গান ও শরীর চর্চার ক্লাসগুলোও অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন:  ঢাকায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এছাড়া শিক্ষার গুণগত মান প্রসারের প্রয়াসে স্কুলটিতে রয়েছে একাধিক ক্লাব। যে ক্লাবগুলো শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে ভূমিকা রাখছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘চেরী ব্লোসমস মাদার্স ক্লাব’। শিশুদের মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ডাক্তারি পরামর্শ, আইনগত পরামর্শ, রান্না শেখানো, ফ্রী ইংলিশ লার্নিং কোর্স, মেহেদী উৎসব, পিঠা-পুলি উৎসবসহ অসংখ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অভিভাবকরা মেতে থাকে।

এই প্রতিষ্ঠান দেশ ও দেশের বাহিরে দারুণ সুনাম অর্জন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ওয়ার্ল্ড হায়েস্ট নাম্বার পেয়ে আমেরিকা, ইউ-কে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপ নিয়ে অধ্যয়ন করছে। এছাড়া স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল আফসানা আমিন ইন্টারন্যাশনাল এসিএসি একজন গর্বিত সদস্য। বিগত বছরে তিনি আমেরিকান দূতাবাসের আমন্ত্রণে আমেরিকার ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেন।

এছাড়া ড. সালেহা কাদের ইউকে এডেক্সসেল এবং পিয়ারসন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে তিনি মিশর, শ্রীলঙ্কা এবং ইউকে-তে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশংসা অর্জন করেন। এসব কনফারেন্সে তিনি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চমকপ্রদ বক্তব্য রাখেন যা সর্বজন প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তিনি বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

আরও পড়ুন:  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চায় ইউনেসকো কমিশন

দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ চেরী ব্লোসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যান ড. সালেহা কাদের ‘ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। এছাড়া একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি ৩০টির বেশি সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়া  বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শোতে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

উল্লেখ্য, শিক্ষা ব্যবস্থায় অভিনব দিগন্ত উন্মোচনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুরে শিক্ষাবিদ ড. সালেহা কাদের প্রতিষ্ঠা করেন এই জ্ঞানালয়। যেখানে দু’যুগের বেশি সময় ধরে সুষ্ঠু পরিবেশে ইউকে কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *