সূর্যের সবচেয়ে কাছে মানুষের তৈরি যান

নাসার একটি মহাকাশযান সূর্যের সবচেয়ে কাছে গিয়ে সক্রিয় থেকে নতুন ইতিহাস গড়েছে। এর আগে কোনো মহাকাশযান তীব্র উত্তাপের মধ্যে সূর্যের এত কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। পার্কার সোলার প্রোভ নামের যানটি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থান থেকে সংকেত পাঠায়। অবশ্য গত কয়েক দিন এটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। এর মধ্যে সূর্যপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৮ লাখ মাইল দূরত্বে পৌঁছাতে সক্ষম হয় পার্কার সোলার প্রোভ। নাসা বলেছে, তাদের অনুসন্ধানী মহাকাশ যানটি ‘নিরাপদ’ আছে। সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছালেও এটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। এর আগে ক্রিসমাসের প্রাক্কালে এটি আমাদের নক্ষত্রের বাইরের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। সূর্য কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পেতে মহাকাশযানটিকে পাঠানো হয়েছে। এ যাত্রায় পার্কারকে সূর্যের তীব্র তাপমাত্রা ও চরম বিকিরণ সহ্য করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদে নামল বেসরকারি মহাকাশযান

প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নাসার বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি বলছে, এ যাত্রায় পার্কার ১ হাজার ৮০০ ফারেনহাইট বা ৯৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করেছে। মহাকাশযানটির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সূর্য ও এর আশপাশের পরিবেশ-প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাবেন; তারা সূর্যঝড়ের বিষয়ে আরও জানতে পারবেন। এ ছাড়া সূর্যের শক্তিকণা সম্পর্কেও ধারণা পাবেন তারা। এ কণা আলোর গতির কাছাকাছি দ্রুততায় চলতে সক্ষম।

নাসার বিজ্ঞান গবেষণার প্রধান ড. নিকোল ফক্স বলেন, ‘শতকের পর শতক ধরে লোকজন সূর্য নিয়ে গবেষণা করছেন। কিন্তু আপনি একটি জায়গার বায়ুমণ্ডলে না গেলে সেখানে আসলে কী ঘটছে, তার সম্পর্কে ধারণা পাবেন না। তাই সূর্যকে জানতে হলেও তার বায়ুমণ্ডলে যেতে হবে।’

আরও পড়ুন:  ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রাবিপ্রবি, উপাচার্যের নানা পদক্ষেপে

২০১৮ সালে পার্কার সোলার প্রোভকে আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র সূর্যের উদ্দেশে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে এটি সূর্যকে ২১ বার প্রদক্ষিণ করেছে এবং ক্রমেই আরও কাছাকাছি প্রবেশ করেছে।

তাহলে এত তীব্র তাপমাত্রা কীভাবে সহ্য করল মহাকাশযানটি? মূলত এতে ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পুরো একটি কার্বনের ঢাল রয়েছে। এ ছাড়া মহাকাশযানটির মধ্যেও ব্যবহার করা হয়েছে তাপসহনশীল প্রযুক্তির। এ ছাড়া পার্কার সোলার প্রোভ দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম। এটি এত দ্রুত চলে, লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে যেতে এর সময় লাগবে ৩০ সেকেন্ডেরও কম। মহাকর্ষ বলকে কাজে লাগিয়ে এর গতি বাড়ানো হয়।

বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য, তারা পার্কারকে সূর্যের পৃষ্ঠদেশের ঠিক বাইরের বায়ুমণ্ডল করোনায় পাঠাবেন। এতে অনেক রহস্যের জট খুলে যাবে। যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের ফিফথ স্টার লেবসের জ্যোতির্বিদ ড. জেনিফার মিলার্ড বলেন, ‘করোনা আসলেই উত্তপ্ত। কেন এত উত্তপ্ত তার ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই।’ সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *