সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া ভবনের দপ্তরগুলো যাচ্ছে অধীনস্থ সংস্থার অফিসে

বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যক্রম সচল রাখতে অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার দপ্তরে অস্থায়ী অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গুলিস্তানের জিপিওতে অফিস করবে। শ্রম মন্ত্রণালয় কাকরাইলের শ্রম ভবনে এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে কার্যক্রম শুরু করবে।

একইভাবে সেতু বিভাগ মহাখালী সেতু ভবনে যাবে এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জাতীয় ক্রীড়া ভবনে তাদের অফিস পরিচালনা করবে।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম তারিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কার্যক্রম ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে রেল ভবন এবং প্রবাসী কল্যাণ ভবনে অফিস করা যায় কি না সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন:  যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
তবে রেল ভবনে মাত্র চারটি কক্ষ পাওয়া যাচ্ছে, যা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে যে জায়গা আছে, তা দিয়ে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা চান স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ একই জায়গায় অফিস করুক।’

আগামী রবিবার থেকেই কার্যক্রম শুরু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জানে আলম বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে মেইলিং অপারেটর এবং কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এটি ঢাকার গুলিস্তানের জিপিওতে অবস্থিত।’

তিনি জানান, বিভাগের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আপাতত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে অফিস করবেন।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘রবিবার সকাল ৯টায় কাকরাইলের শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে কার্যক্রম শুরু করা হবে। সেখানে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে অস্থায়ীভাবে কোথায় অফিস স্থাপন করা হবে।

আরও পড়ুন:  একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতিকে শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
তিনি আরো জানান, বর্তমানে শ্রম ভবনেই শ্রম মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তর স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. গোলাম মো. ফারুক বলেন, ‘রবিবার থেকে আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কার্যক্রম শুরু করব। আগে থেকেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং সচিবদের অফিস রয়েছে। ফলে আমাদের জন্য নতুন করে অফিস সাজানোর প্রয়োজন নেই।’

তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোথায় অফিস করবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আছির উদ্দীন সরদার বলেন, ‘শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কেউ কেউ বলছেন তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে অথবা মহাখালীর সেতু ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হতে পারে।’

এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়। আগুনে পুড়ে গেছে ৫টি মন্ত্রণালয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের টানা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে ৭ নম্বর ভবনে লাগা ওই আগুন।

আগুনের ঘটনায় কোনো মানুষের প্রাণহানি ঘটেনি। তবে আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত হন ফায়ার ফাইটার মো. সোহানুর জামান। এছাড়া পোড়া ভবনটি থেকে একটি কুকুরের পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন:  সচিবালয়ে প্রবেশ পাসের বিশেষ সেল গঠন

আগুনের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *