ইন্টারপোলের তালিকায় আছেন যেসব বাংলাদেশি

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ফিরিয়ে আনতে প্রক্রিয়া শুরু করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এ প্রক্রিয়া এখনও প্রাথমিক স্তরেই আছে। ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধে যুক্ত থাকা অপরাধীদের তালিকায় এখনও তাদের কারো নাম ওঠেনি। বিশ্বজুড়ে পুলিশবাহিনীকে সহায়তা করা আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন বা ইন্টারপোলের তালিকায় তাই সঙ্গত কারণেই এখনও তাদের নাম নেই। নাম পাওয়া যায়নি অন্য কোন রাজনীতিবিদ বা দেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরও।

তবে আন্তর্জাতিক পুলিশকে সহায়তা করা ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড লিস্ট বা অপরাধীদের তালিকায় আছে নানা কারণে বিশ্বজুড়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়া বেশ কিছু বাংলাদেশির নাম। এসব অপরাধীকে নিয়ম করে খুঁজছে ইন্টারপোল। তারা যেসব দেশে অপরাধ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে আছে সেসব দেশ ওই তালিকায় উঠিয়েছে তাদের নাম। ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তাদের।

এ তালিকায় বাংলাদেশ সরকার থেকে পাঠানো বেশ কিছু নামও আছে। তাদের খুঁজছে বাংলাদেশ সরকার। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি কুমিল্লার খন্দকার আব্দুর রশীদ, রাশেদ চৌধুরী, নুর চৌধুরী ও শরীফুল হক ডালিমের নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এক সময়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম ফারুক অভি, সুব্রত বাইন, প্রকাশ কুমার, কালা জাহাঙ্গীরের নাম দুই দশক ধরে ঝুলছে ওই তালিকায়। এদের অনেকের অবস্থান সম্পর্কে সরকার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টারপোলকে তথ্য দিলেও নানা কারণে তারা গ্রেপ্তার হননি। এর বাইরের নামগুলো সাধারণ মানুষের কাছে খুব বেশি চেনা নয়, যদিও তাদের অপরাধের মামলাগুলো আলোচনায় আসছে নানা সময়ে। তালিকায় মানবপাচার, পর্নোগ্রাফি, হত্যা, সন্ত্রাস, অস্ত্রমামলা, অস্ত্র চোরাচালান, জালিয়াতি ইত্যাদি অভিযোগেও অনেক বাংলাদেশির নাম রয়েছে।

আরও পড়ুন:  ছয় সমন্বয়কের অভিযোগ সঠিক নয় : নতুন ডিবিপ্রধান

আর এ যাবতকালে ইন্টারপোল বাংলাদেশকে মাত্র ১৭জন চিহ্নিত অপরাধীকে খুঁজে দিতে পেরেছে। তবে ইন্টারপোলে নাম ওঠার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশ্বের ১৯৬টি দেশে যে কোন সময় হতে পারে তল্লাশি। গ্রেপ্তারের ভয়ে তাই পুলিশ দেখলেই তটস্থ থাকতে হয় তাদের।

দেখা গেছে, ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে এ মুহূর্তে সারা বিশ্বের ৬ হাজার ৬৫৮ জন অপরাধী বা সম্ভাব্য আসামির তালিকা রয়েছে। এই সাড়ে ছয় হাজারের মধ্যে ৬৩ জন বাংলাদেশি। দেশে বিদেশে অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ তাদের খুঁজছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ, আফ্রিকা ও বেলজিয়াম উল্লেখযোগ্য।

যেসব বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্রের অভিযোগ

বিদেশি রাষ্ট্র যেসব বাংলাদেশিকে খুঁজছে ৬৩ জনের মধ্যে চাঁদুপর সদরের রাজু ঢালীকে খুনের অভিযোগের মামলায় খুঁজছে সিঙ্গাপুর। আফ্রিকার দেশ ইসতাওয়ানি খুনের অভিযোগে খুঁজছে ঢাকার মো. মিলন ও লিটন ব্যাপারীকে। খুনের অভিযোগে নোয়াখালীর মিজান মিয়াকে খুঁজছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মুদ্রা জালিয়াতির অভিযোগে খুলনার আজিজুর রহমান, অজয়বিশ্বাস ও তরিকুল ইসলাম, নোয়াখালীর সবুজ, গোপালগঞ্জের আব্দুল আলীম শরীফ, নারায়ণগঞ্জের মনির ভুইয়া, চাপাইনবাবগঞ্জের শফিকুলকে খুঁজছে ভারত।

আরও পড়ুন:  ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই একসময় খেসারত দিতে হবে’

ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম খুনের অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের খোরশেদ আলমকে খুঁজছে। চোরাচালানির অভিযোগে নাটোরের সিরাজ মোস্তফাকে এবং খুনের অভিযোগে ফেনীর আলা উদ্দিনকে খুঁজছে মালয়েশিয়া। তছরুপের অভিযোগে হানিফকে খুঁজকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ। যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে জাহিদুল ইসলাম ও অস্ত্র মামলায় ফজলুল আমীন জাভেদকে খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ যাদের খুঁজছে

হত্যার অভিযোগের মামলায় বাগেরহাটের রবিউল ইসলাম, টাঙ্গাইলের মোহাম্মদ তাজউদ্দীন ও বাবু আহমেদ রাতুল, চট্টগ্রামের ইউসুফ ও সাজ্জাদ হোসেন, ফরিদপুরের নাইম খান, বগুড়ার কালা জাহাঙ্গীর, গাজীপুরের নুরুল ও মজনু, কুমিল্লার খন্দকার আব্দুর রশীদ ও রাশেদ চৌধুরী, ঢাকার নুর চৌধুরী, নবী হোসাইন, তানভীর ইসলাম জয়, জিসান আহমেদ, তৌফিক আলম, প্রকাশ কুমার, জাফর আহমেদ, সালাউদ্দিন মিন্টু, নাজমুল আনসার, শরীফুল হক ডালিম, খুলনার শরীফুল হোসাইন, চট্টগ্রামের আমিনুর রসুল,নেত্রকোনার আব্দুল জাব্বার, বরিশালের গোলাম ফারুক অভি, সুব্রত বাইন, মুন্সীগঞ্জের রফিকুল ইসলাম, খুলনার হারুন শেখ ও সুলতান, নরসিংদীর মোসলেম উদ্দিন খান এবং খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে গাইবান্ধার চন্দন কুমার রায়কে খুঁজছে বাংলাদেশ।

মানবপাচারের অভিযোগে খুঁজছে কিশোরগঞ্জের জাফর ইকবাল, স্বপন, মিন্টু মিয়া ও তানজীরুল, মাদারীপুরের মোল্লা নজরুল ইসলাম। পর্নোগাফির অভিযোগে টাঙ্গাইলের ওয়াসিম, অস্ত্র মামলায় গিয়াস উদ্দিন, নির্যাতনের মামলায় চট্টগ্রামের অশোক কুমার দাশ, জালিয়াতির অভিযোগে জামালপুরের আমানুল্লাহ এবং আতাউর রহমানকে খুঁজছে বাংলাদেশ। এছাড়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন খোকন, সৈয়দ মো. হাছান আলী, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল জব্বার ও সৈয়দ মো. হোসেনকেও খুঁজছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন:  রবিবার খুলছে দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবনের দুয়ার

ইন্টারপোলের কার্যক্রম

১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারপোল বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের সদস্য বিশ্বের ১৯৬টি দেশ। আন্তর্জাতিক এই সংস্থা বিশ্বকে নিরাপদ রাখতে পুলিশ এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞদের একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ও সমন্বয় করে। যদি একটি দেশের আসামি সেখানে অপরাধ করার পর অন্য দেশে চলে যায়, তখন সেই আসামিকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা লাগে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশকে সন্দেহভাজন অপরাধীর যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করতে হয়। ইন্টারপোল সদর দপ্তরে আবেদনের পর ওই অভিযুক্তের অপরাধ বিষয়ক যাবতীয় কাগজপত্র, মামলার অনুলিপি ইত্যাদি সংগ্রহ করে ইন্টারপোলের কাছে দিতে হয়। ইন্টারপোল সেই কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *