অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : এটর্নি জেনারেল

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রিনেমড হতে পারে। যেমন জেলা ও দায়রা জজ একই ব্যক্তি, যখন সিভিল মামলা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ, আবার ওই একই ব্যক্তি যখন ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনা করেন তখন তিনি দায়রা জজ। তেমনি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যক্তিরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে চলে যাবে, ওনারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হবেন। এটায় সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতার কোনো জায়গা নেই।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগে (ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার) যে রিভিউ পেন্ডিং আছে তা বাইপাস করেই হাইকোর্টের এই রায়ের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন আছে? কারণ, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দুটি পার্ট। এক হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ নাকি অবৈধ। এই পার্টে চারজন বলছেন অবৈধ, তিনজন বলেছেন, বৈধ। আবার দ্বিতীয় পার্টে সব বিচারপতি বললেন, পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে। এই যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে এটা বলার আগেই পঞ্চদশ সংশোধনী চলে এসেছে। তাহলে ধরে নেয়া হবে, ওই জাজমেন্ট কার্যকর আছে। তা হলে কমপক্ষে আগামী দুটি নির্বাচনে তো আপিল বিভাগের এটেনশন লাগে না। অর্থাৎ আপিল বিভাগে থাকা ত্রয়োদশ সংশোধনীর রিভিউ রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় না।

আরও পড়ুন:  একজন নিভৃত চারণকবি দিদারুল আলম রফিক

এটর্নি জেনারেল বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন কীভাবে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে, সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, বিচার বিভাগ কীভাবে এফেক্টেড হয়েছে, সে কথাগুলো রায়ে বলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রেফারেন্ডাম তথা জনগণের ক্ষমতা সংকুচিত করার বিধান অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে গণভোট ফিরিয়ে আনার বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয় পরবর্তী পার্লামেন্ট দেখবেন বলে রায়ে বলা হয়েছে।

তৎকালীন দুই প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচার বিভাগ ধ্বংসের জন্য দায়ী উল্লেখ করে এটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রায়ের ১৭ মাস পর খায়রুল হক তা প্রকাশের বিষয় তুলে ধরেন।

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল আংশিক যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের এই ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে, যেটি হচ্ছে গণতন্ত্র। এ ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন:  প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘এশিয়া ক্লাইমেট মবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার’ অ্যাওয়ার্ড তুলে দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী

পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না উল্লেখ করে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, সংশোধনী আইনের বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার আগামী জাতীয় সংসদের। সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।

রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বাতিল ঘোষণা করেছেন। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ‌নির্বাচনের মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তি চায় ভারত

এই রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন। শুনানিতে রিট আবেদনকারী, বিএনপি, রাষ্ট্রপক্ষ, জামায়াত, গণফোরাম, ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য তুলে ধরেন।

অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন গত অক্টোবরে একটি রিট আবেদন করেন। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর দ্বাদশ দিনে ৪ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। পরদিন আদালত রায়ের জন্য আজ ১৭ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় পর্যবেক্ষণসহ রুল আংশিক যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *