ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ১৪৫ নাগরিকের বিবৃতি

ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দেশটির জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১৪৫ জন নাগরিক। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।

নাগরিকদের পক্ষে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ। বিবৃতিতে তারা বলেন, সাধারণ জনগণের জীবনের সংকট বিচার করলে দুই দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা আর শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব, আপনারাও আপনাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।

ভারতের জনগণের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা এমন এক সংকটপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছি, যখন ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শোচনীয় অবস্থায় এবং কিছু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমাগত উসকানি এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে। ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে আমরা কখনোই এক করে দেখি না। আমরা জানি, ভারতের জনগণও হিন্দুত্ববাদী শক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে তার পতন ঘটিয়েছি আমরা। জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের সময় আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনাদের আর আপনাদের আন্দোলনে আমাদের সংহতি প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনেক দিনের।

আরও পড়ুন:  ঢাকায় নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করল মার্কিন দূতাবাস

সাম্প্রদায়িকতাকে ভারতীয় উপমহাদেশের বড় সমস্যা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে বিভাজন ঘটায়, ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করে বিভেদ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের অধিকার, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং জনজীবনের আরও অনেক জলজ্যান্ত সমস্যা আড়াল করার জন্য উপমহাদেশের প্রত্যেক শাসকগোষ্ঠীই সাম্প্রদায়িকতার হাতিয়ার কাজে লাগিয়েছে। তারা এই কৌশল খাটিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু উভয় জনগোষ্ঠীর ভোট পাওয়াটা নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কালে সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলার ঘটনা বারবার ঘটতে দেখা যায়।

সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারত সরকার দুঃখ প্রকাশ করলেও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনা যথাযথভাবে দেখানো হোক। এ ধরনের প্রচারণা থেকে যেকোনো দেশেই লাভবান হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি, লাভবান হয় শাসকগোষ্ঠী।

আরও পড়ুন:  কলকাতা মিশনে ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করল বাংলাদেশ

এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশীদ, অধ্যাপক স্বাধীন সেন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, তুহিন ওয়াদুদ, সংগীতশিল্পী সায়ান, প্রীতম দাশ, দীপ্তি দত্ত, সৌম্য সরকার, ড. সামিনা লুৎফা, আলতাফ পারভেজ, সারোয়ার তুষার, আশরাফ কায়সার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানজুর আল মতিন, খোকন দাস, বীথি ঘোষ, রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, ছাত্রনেতা মেঘমল্লার বসু, স্থপতি সুব্রত সরকার, সুরেশ বাসফোর, কল্লোল মোস্তফা, মাহা মীর্জা, ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, কামাল চৌধুরী, মোশাহিদা সুলতানা, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও আছেন—নারী নেত্রী সীমা দত্ত, ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সোমা, শিক্ষক আর রাজি, শর্মি বড়ুয়া, চলচ্চিত্র নির্মাতা ধ্রুব দাশ, লেখক-গবেষক-শিক্ষক ফাহমিদুল হক, হাসান তৌফিক ইমাম, নাসির আহমেদ, রুশাদ ফরিদী, রাজনৈতিক কর্মী বাকী বিল্লাহ, অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ, কবি সৈকত দে, ডা. তন্ময় সান্যাল, সুস্মিতা রায় সুপ্তি, স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী, ডা. মহিউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *