২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছিল, এর মধ্যে প্রায় ৭০০ লাইসেন্স বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। এসব অস্ত্রধারীর নামে মামলাও করেছে পুলিশ। মূলত সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে থানায় অস্ত্র জমা না দেওয়ায় লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে বৈধ অস্ত্রধারীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে সরকার। এসব অস্ত্রধারী সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে থানায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন। ফের অস্ত্র ফেরত পেতে তারা আবেদন করেছেন। কিন্তু যাছাই-বাছাই ছাড়া তাদের অস্ত্র ফেরত দেবে না প্রশাসন। এজন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে চারজনের একটি কমিটি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কমিটির সদস্য সচিব হয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সদস্য করা হয়েছে জেলা পুলিশ সুপার এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার উপপরিচালককে।
কর্মকর্তারা জানান, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘ব্যক্তিগত’ নিরাপত্তার জন্য নেওয়া অস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়ে ডিসি ও এসপিদের চিঠি পাঠানো হয়। এরপর একাধিকবার সময় দিলেও বৈধ অস্ত্রধারী অনেকেই অস্ত্র জমা দেননি। তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা। তারা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ‘বিশেষ সুপারিশে এবং বিশেষ উদ্দেশ্যেই’ অস্ত্রের লাইসেন্স পান। থানায় জমা না হওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে এসপিদের মামলা করার নির্দেশ দেন ডিসিরা। ৭০০-এর কিছু কম-বেশি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
লাইসেন্স বাতিল হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় সবচেয়ে বেশি। এসব অস্ত্রের অপব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
অস্ত্র ফেরত পাবেন না ফৌজদারি মামলার আসামিরা: সরকারের নির্দেশ মেনে থানায় জমা দেওয়া অস্ত্র ফেরতের জন্য যারা আবেদন করেছেন, তাদের ফেরত দিতে যাছাই-বাছাই করবে সরকার। কে কোন যোগ্যতায় লাইসেন্স পেয়েছিলেন, সেসব বিষয় বিশ্লেষণ করা হবে। তারা যদি অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তাহলে তাদের অস্ত্র ফেরত দেবে প্রশাসন। এ-সংক্রান্ত কমিটি এরই মধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিভাগের ২৫ আগস্টের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ অনুযায়ী জমা হওয়া বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সধারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেরত দিতে হলে বিশদভাবে যাছাই-বাছাই করতে হবে। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ইস্যুকৃত এবং যেসব অস্ত্র ফেরত দিলে তা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হবে, সেসব অস্ত্র ফেরত দেওয়া হবে না। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা চলমান আছে বা যারা ফৌজদারি অপরাধে এরই মধ্যে দণ্ডিত হয়েছেন, তাদের অস্ত্র ফেরত দেওয়া হবে না।
এ কমিটি প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত নির্ধারিত তারিখের পরে জমাকৃত অস্ত্রের বিষয়ে যৌক্তিকতা পর্যালোচনাপূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুপারিশ প্রণয়নপূর্বক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠাবে। কমিটি প্রতিটি আবেদনের যৌক্তিকতা পৃথকভাবে বিশ্লেষণপূর্বক সিদ্ধান্ত নেবে। এ ছাড়া গৃহীত সব সিদ্ধান্তের প্রতিবেদন প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিসি জানান, বৈধ অস্ত্রধারীদের রাজনৈতিক পরিচয় এবং সমাজিক মর্যাদাও বিবেচনায় নেওয়া হবে। আদৌ তাদের অস্ত্রের প্রয়োজন আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা অনুসরণ করেই অস্ত্র ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা আছে, আমরা সেটিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছি। বিশেষ করে ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কিংবা মামলা চলমান—এমন ব্যক্তিরা অস্ত্র ফেরত পাবেন না। তাদের লাইসেন্সও বাতিল হচ্ছে।