একটি সূত্র জানায়, ওপারে বন্দর ও এর আশপাশে অতিরিক্ত বিএসএফ মোতায়েন করা হয়। এ অবস্থায় সকাল ১১টা থেকে এপারে বিজিবিকেও সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা যায়। এসবের মধ্যেই যাত্রীরা যাওয়া-আসা করেছেন। প্রায় ৩০০ যাত্রী মঙ্গলবার যাওয়া-আসা করে, যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি।
এদিকে মাছ আমদানিতে আগ্রহ থাকলেও ওপারে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার ত্রিপুরার হোটেল মালিকদের এক সভা থেকে এ সিদ্ধান্তের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। হোটেলে অবস্থানরত বাংলাদেশিদেরকেও চলে যেতে বলা হয়। এর আগে আগরতলায় অবস্থিত আইএলএস নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসেবা দেবা না বলে ঘোষণা দেয়।
চিন্ময় দাস গ্রেপ্তার ইস্যুসহ বিভিন্ন কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি চলছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ভারতের ত্রিপুরাসহ বিভিন্নস্থানে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। সেদেশে বাংলাদেশি পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ সোমবার ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনারের আগরতলার কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ভারত থেকে আসা কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জের উজ্জল দেবনাথ মঙ্গলবার সকালে জানান, বন্দরে ঢোকার পথেই সড়কে বাঁশের বেড়া দেওয়া দেখে এসেছেন। এটি পার হয়ে আসতে খুব কষ্ট হয়। তবে আসতে কেউ বাধা দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন জানান, তার স্ত্রীও বেড়া দেওয়ার খবর পেয়ে যান। এ কারণে বারবার তাগাদা দেওয়ায় তিনি চলে এসেছেন। সেখানে বাংলাদেশিদের জন্য একটা ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে ফিরে আসা কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাসিন্দা মো. ফরিদ মিয়া জানান, কলকাতা যাওয়ার জন্য তিনি সোমবার আগরতলায় যান। রাতে থাকার জন্য একটি হোটেলে উঠেন তিনি। ঘণ্টাখানেক পর হোটেলের লোকজন এসে তাকে চলে যেতে বলে। পরে ৮০ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটিয়ে চলে এসেছেন।
রাস্তায় অনেক জায়গায় বাংলাদেশবিরোধী স্লোগান দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা বলাবলি করছিলো ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) পেলে পেটানো হবে।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান জানান, শিলচরে চলতে থাকা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে জামদানির স্টল দিয়েছিলেন। সোমবার একদল যুবক এসে জয় শ্রীরাম বলে স্লোগান দিয়ে স্টলে ভাঙচুর চালায়।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেসার উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকেই মাছ যাওয়া শুরু হয়। নিজেদের মধ্যে আলোচনা আছে জানিয়ে তার আগেভাগে মাছ দিতে বলেন। সে অনুযায়ী অন্যদিনের তুলনায় আগেভাগেই মাছ যায়।
আরেক ব্যবসায়ী মো. হাসিবুল হাসান জানান, ওপারে বিভিন্ন কর্মসূচির কথা শুনা গেলেও রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভারতীয়দের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, যদি পণ্য পাঠানো হয় তাহলে তারা সেটি গ্রহণ করবেন।
আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খাইরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, আসা-যাওয়া করা যাত্রীদের বেশিরভাগই ভারতীয়। ফেরত আসা বাংলাদেশিরা ওপারে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।