বিশ্বব্যাংক তাদের সাম্প্রতিক “বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট” প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামী এক বছর চাপের মধ্যে থাকবে। তারা পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমে ৪ শতাংশে নামতে পারে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ হার পুনরায় বেড়ে ৫.৫ শতাংশ হতে পারে।
সংস্থাটি আরও পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমবে, যা দেশের জনগণকে স্বস্তি দিতে পারে। বর্তমানের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, এই মূল্যায়ন থেকে বোঝা যাচ্ছে যে অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের পথে যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে ওয়াশিংটন থেকে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ধ্রুব শর্মা, ইকোনমিস্ট নাজমুস খান এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিঃখাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা এখনো ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এটি অত্যন্ত উচ্চ হার। যেখানে ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী হার হবে ৪ শতাংশ।
এর আগে গত এপ্রিলে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জন্য ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। যদিও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের হিসাবে সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম হবে প্রবৃদ্ধি।
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, দেশে কর্মের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে গরমিল রয়েছে। সেটি একটি বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার অমিল রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি খারাপ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে তার মতামত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও, শিক্ষিত ও শহুরে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, যা দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবদৌলায়ে সেক আরও বলেন যে, বাংলাদেশের জন্য উচ্চ মূল্যস্ফীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি, বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতি, অনেক বেশি রয়ে গেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পাচ্ছে এবং বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জোর দেন যে, বৈষম্য কমানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং আর্থিক খাতে সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
…….ডিডিজে নিউজ/এম এফ