তিন বছরের ঋণের পরিকল্পনা জানতে চাইবে আইএমএফ

বাড়তি তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রস্তাব যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পাঁচ সদস্যের একটি মিশন গতকাল সোমবার ঢাকায় পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলটি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক শুরু করার কথা রয়েছে। এসব বৈঠকে সংস্থাটি সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর, আগামী দুই অর্থবছরে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের পরিকল্পনা জানতে চাইবে। 

একই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি কমিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উন্নতিসহ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আজ মিশনটি অর্থ উপদেষ্টা ছাড়াও অর্থ বিভাগের ঋণ ব্যবস্থাপনা ও বাজেট টিমের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবে। ঋণ ব্যবস্থাপনা টিমের সঙ্গে বৈঠকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর সরকারের স্থানীয় ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ও বর্তমান পরিস্থিতি এবং পরবর্তী দুই অর্থবছর এ ঋণের প্রাক্কলন জানতে চাইবে। গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণ গ্রহণ এবং পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা এবং আগামী দুই অর্থবছরে বিদেশি ঋণের প্রাক্কলন নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া সরকারি গ্যারান্টি, বন্ড ইস্যু ও সহজ শর্তের ঋণের পাশাপাশি গত অর্থবছর কী পরিমাণ অনুদান পাওয়া গেছে এবং চলতিসহ আগামী তিন অর্থবছরে কী পরিমাণ অনুদান পাওয়া যাবে, সে বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ৮৮ বিলিয়ন ডলার বা ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং বাকি ৬৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ। চলতি বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন:  আইএমএফ: চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি কমার পূর্বাভাস

এদিকে বিভিন্ন বৈঠকে সরকার পরিবর্তন ও সাম্প্রতিক বন্যার প্রেক্ষাপটে স্বল্পমেয়াদি অগ্রাধিকার, বাজেট সহায়তা এবং আর্থিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া গত অর্থবছরের বাজেটে আইএমএফের শর্তের বাস্তবায়ন এবং চলতি বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ও বর্তমান পর্যন্ত অগ্রগতি জানতে চাওয়া হবে।
সার্বিকভাবে ভর্তুকি কমানো বিশেষ করে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে বছরে চার দফা দাম বাড়ানোসহ বেশ কিছু কঠিন প্রতিশ্রুতি আইএমএফ দিয়েছিল গত আওয়ামী লীগ সরকারকে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়নি, এসব বিষয়ে নতুন সরকারের অবস্থানের পাশাপাশি নতুন কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, তা জানতে চাইবে আইমএফ মিশন। সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিধি দল ভর্তুকি কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির চাপও দিতে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট সামাল দিতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারের শর্তে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। সম্প্রতি এ ঋণের পরিমাণ আরও তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৭৭০ কোটি ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। বাড়তি ঋণের জন্য আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এর ফলে নতুন প্যাকেজের বিপরীতেও আসবে নতুন শর্ত।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন আহসান এইচ মনসুর

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার সমকালকে বলেন, জ্বালানিসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের দায় রয়েছে। এগুলো পরিশোধে ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। তা ছাড়া গত কয়েক বছর অর্থ পাচার এবং সঠিক সময়ে নীতি গ্রহণ না করার কারণে অনেক অর্থ দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস আমদানি বিল পরিশোধ করা সম্ভব। তবে রিজার্ভটা বাড়িয়ে এটি চার থেকে পাঁচ মাসে উন্নীত করতে পারলে ভালো হয়। সেটি করতে এ বাড়তি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *