জটিল ও চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে জাতিসংঘে সমবেত হচ্ছেন বিশ্বনেতারা

ব্যাপক যুদ্ধ, বর্ধমান জনতুষ্টিবাদ ও কূটনৈতিক অচলাবস্থার বিস্ফোরক প্রেক্ষাপটে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে রবিবার থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সমবেত হতে যাচ্ছেন বিশ্বনেতৃবৃন্দ।

জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘের এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগদানকারী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের উচ্চ-স্তরের আলোচ্য সূচিতে গাজা যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, সুদানে গৃহযুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এবং ইউক্রেনে প্রচণ্ড সংঘাতের মতো বেশ কিছু তিক্ত বিষয় স্থান পাবে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই সপ্তাহে জোর দিয়ে বলেছেন, বিশ্ব ‘তৃতীয় বিশ্বদ্ধের দিকে অগ্রসর হওয়া এড়াতে সক্ষম হবে।’গুতেরেস এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা হল সংঘাত ও দায়মুক্তির বোধের বহুগুণে বৃদ্ধি।’

ওয়াশিংটনে জাতিসংঘ দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, অধিবেশনটি ‘এর চেয়ে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে হতে পারত না। মনোযোগ ও পদক্ষেপের দাবি করে এমন সংকট ও সংঘাতের তালিকা কেবল বেড়েই চলেছে বলে মনে হচ্ছে। এতে সহজেই হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু আমাদের হতাশ হলে চলবে না।’

বিশ্বব্যাপী সংঘাত ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত লাখো মানুষের কল্যাণে কূটনীতির এই বিশ্ব মিলনমেলা আদৌ কিছু অর্জন করতে পারবে কি-না তা স্পষ্ট নয়। ইসরাইলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন:  সৌদি আরবে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের রিচার্ড গোওয়ান বলেন, বিশ্বনেতৃবৃন্দের বক্তব্য বিবেচনায় নিলে ‘স্পষ্টতই এই সংঘাতগুলোর মধ্যে গাজা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।’ তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, পূর্ব-নির্ধারিত কূটনৈতিক বক্তৃতা ও দৃষ্টিভঙ্গি ‘আসলে বাস্তব পরিস্থিতিতে তেমন বড় কোনো বদল ঘটাবে না।’

ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপি’র তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, এতে ১,২০০ জনেরও বেশি ইসরাইলির প্রাণহানি ঘটে। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ২৭২ জনেরও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সংঘর্ষ লেবাননে ছড়িয়ে পড়তে পারে। চলতি সপ্তাহে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইসরাইল এই হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
আগামী বছরগুলোতে বিশ্ব মুখোমুখি হতে পারে এমন সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের ফ্ল্যাগশিপ প্রচেষ্টা ‘সামিট অফ দ্য ফিউচার’ দিয়ে রবিবার নিউইয়র্কে কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্বনেতৃবৃন্দ সামনে এগিয়ে যেতে সবচেয়ে গুরুতর সংঘাতসমূহ কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে একটি সমঝোতায় উপনীত হতে একত্রিত হবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিবিড় আলোচনা এবং বিশ্বনেতাদের ‘সাহস’ দেখাতে গুতেরেসের আহ্বান সত্ত্বেও পর্যবেক্ষকরা সমঝোতার খসড়া টেক্সটটিতে উচ্চাক্সক্ষার ঘাটতি রয়েছে বলে তীব্র সমালোচনা করছেন।

আরও পড়ুন:  পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন ইরানের ?

একজন কূটনীতিক বলেছেন, এর ঝুঁকিগুলোর অন্যতম- এবং ঝুঁকির চেয়েও বেশি- হলো যে ‘ভবিষ্যতের শীর্ষ সম্মেলন’টিকে ‘অতীতের শীর্ষ সম্মেলনের’ মতোই দেখাতে পারে এবং সর্বোত্তম পরিস্থিতিতে ‘বর্তমানের শীর্ষ সম্মেলনের’ বেশি কিছু মনে নাও হতে পারে।

গুতেরেস এই শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব রয়েছে বলে জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে আমাদের সক্ষমতার চেয়েও দ্রুত এগিয়ে চলেছে।’তিনি বলেন, ‘আমরা ভূ-রাজনৈতিক বিভাজনকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখছি এবং দেখতে পাচ্ছি, শুধু ইউক্রেন, গাজা, সুদানে নয়, এর বাইরেও সংঘাত নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়াচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন, অসমতা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো মোটেই এর সাথে তাল মিলাতে পারছে না।’

আইসিআরসির জাতিসংঘের প্রতিনিধি ল্যাটিটিয়া কোর্তোয়া বলেছেন, সংঘাত ‘পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উদ্দেশ্য’ হিসাবে নয়, ‘এখনই’ মোকাবেলা করা অত্যাবশ্যক।

এ শীর্ষ সম্মেলনের পর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের উচ্চ-স্তরের সপ্তাহ শুরু হবে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্র এতে ভাষণ দেবে। শুরু হবে ব্রাজিলকে দিয়ে। এর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এতে ভাষণ দেবেন। তিনি অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে বক্তর‌্য রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন:  জিম্মি আবদুল্লাহর কাছাকাছি ইইউর যুদ্ধজাহাজ

ধারণা করা হচ্ছে, চীন ও রাশিয়ার নেতারা বিগত বছরগুলোর মতো অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকবেন। তবে ব্রিটেনের কেয়ার স্টারমার, ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ব্রাজিলের লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা উপস্থিত থাকবেন।

২০২৩ সালে ইউক্রেনের জেলেনস্কি অধিবেশনে তারকা আকর্ষণ ছিলেন। একজন কূটনীতিক বলেন, এই বছর স্পটলাইটে থাকতে তাকে বেশ বেগ পেতে হবে। তবে ইতোমধ্যে আলোচিত ‘বিজয়ের পরিকল্পনা’ নিয়ে তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন এটা বেশ স্পষ্ট।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিরেশন উপলক্ষ্যে গালা ইভেন্টের আগে জাতিসংঘের রিভারফ্রন্ট সদর দপ্তরের চারপাশে ইস্পাতের একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এদিকে এ সময় অবিরাম ভিআইপি মোটরবহর চলাচল এবং সড়ক বন্ধের কারণে ট্রাফিক অচলাবস্থার জন্য স্থানীয় জনসাধারণ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *