আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি যাচাই করছে অন্তর্বর্তী সরকার

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তিটি যাচাই-বাছাই করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০১৭ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার আদানি গ্রুপের সঙ্গে তাদের ঝাড়খণ্ড ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুক্তির শর্তাবলি এবং বিদ্যুতের জন্য যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা ন্যায্য কি না খতিয়ে দেখতে চায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তর্বর্তী সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আদানি গ্রুপের মতো ভারতীয় কম্পানিগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি যাচাই-বাছাই করা হবে।

তাদের সঙ্গে কী ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে? কী ধারা বা শর্তাবলি দেওয়া হয়েছে? দেশের আইন না মেনে বিদেশি কম্পানি থাকতে পারে না।’ তিনি আরো বলেন, এই তদন্তের মূল লক্ষ্য ভারতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো নয়। বরং বাংলাদেশ আসলে আদানি পাওয়ারকে কত টাকা দিচ্ছে, সেটা যৌক্তিক কি না সেসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আদানি গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও আদানি পাওয়ার লিমিটেডের (এপিজেএল) মধ্যে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়। ২৫ বছরের জন্য এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষর করে তারা। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার। এখনো সেখান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে ঢাকা।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ আদানি গ্রুপের গড্ডা কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনবে। এই ইউনিটটি ১০০ শতাংশ আমদানি করা কয়লা দিয়ে চালানো হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এটি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে এবং বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের ৭-১০ শতাংশ সরবরাহ করা শুরু করে। ২০২৩-২৪ সালে এটি প্রায় সাত হাজার ৫০৮ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে, যা ভারতের বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রায় ৬৩ শতাংশ। মূল্য হিসাবে ভারতের বিদ্যুৎ রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা ভারতের বাংলাদেশের কাছে মোট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ।

আরও পড়ুন:  দ্রুত শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে: শ্রম উপদেষ্টা
আদানি পাওয়ারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার আমাদের পিপিএ পর্যালোচনা করছে—এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা প্রকৃত অংশীদারির চেতনা নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি, যদিও আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাওনা রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং আমাদের পাওনা দ্রুত পরিশোধের জন্য অনুরোধ করেছি। কারণ এটি আমাদের কার্যক্রমকে টেকসই রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।’

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বকেয়া নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করেছে আদানি গ্রুপ।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ঢাকার মোট বিদ্যুৎ দায় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার এবং আদানির ৪৯২ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে। আদানির মোট পাওনা ৮০০ মিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন:  হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৪

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল প্রতি ইউনিটে আট টাকা ৭৭ পয়সা। তবে এটি কম্পানিভেদে ভিন্ন ছিল। এনভিভিএল লিমিটেডের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের মূল্য ছিল চার টাকা ২২ পয়সা থেকে আট টাকা ৪৫ পয়সা। পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড ৯ টাকা ৫ পয়সা, সেমক্রপ এনার্জি ইন্ডিয়া ৯ টাকা ৯৯ পয়সা এবং আদানি পাওয়ার বা এপিজেএল ১৪ টাকা দুই পয়সা।

…….ডিডিজে নিউজ/এম এফ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *