তিনি বলেছেন যে ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যরা ফ্লোর ক্রসিং করতে পারেন না, অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বাধীনভাবে কোনো মতামত বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাদের নেই। এই অনুচ্ছেদটি কার্যত সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা সীমিত করে এবং দলীয় নেতৃত্বের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা বাড়ায়। এই ধরনের বিধি যে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদীয় প্রতিনিধিদের স্বাধীন চিন্তা এবং মতপ্রকাশের সুযোগ কমিয়ে দিতে পারে, যা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, এই অনুচ্ছেদের সংস্কার করলে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হতে পারে এবং শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
এর মাধ্যমে তিনি মূলত চাইছেন যে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে সক্ষম হন, যা জাতীয় স্বার্থ এবং আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে উন্নত করবে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৬টি বিষয় সংস্কারে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. শাহদীন মালিক।
প্রধান উপদেষ্টার সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে উদ্যোগটা নিয়েছেন সেটা গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই এই উদ্যোগটা নিয়েছেন। বিচার বিভাগ, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে জনগণের মধ্যে একটা দাবি আছে। সেই দাবিটাকে ধারণ করেই উনি উদ্যোগটা নিয়েছেন। এটা নিশ্চিতভাবেই একটা ইতিবাচক উদ্যোগ বলে আমি মনে করি।’
এই সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাটা খুবই ন্যূনতম
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বাংলাদেশর যে বাস্তবতা বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি, উনারা (অধস্তন আদালতের বিচারক) ধরেই নিয়েছিলেন উনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। উনারা ভুলে গিয়েছিলেন যে উনারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।’
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কোনো সাংবিধানিক কোনো ক্ষমতা নাই। অ্যাপারেন্টলি (দৃশ্যত) দেখা যায় দুটো ক্ষমতা আছে। একটা ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা, আরেকটা হলো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেই যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারবেন না। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাকে বলবে, তাকে নিয়োগ দিতে পারবেন। প্রধান বিচারপতির নিয়োগেও রাষ্ট্রপতি সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেননি। ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিকভাবে কতটুকু ক্ষমতাবান, এটা যারা সংবিধান বিশেষজ্ঞ আছেন, তারা জানেন। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বলতে পারি এই সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাটা খুবই ন্যূনতম।
অ্যাটর্নি জোনরেল বলেন, আমি চাই প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পাশে দাঁড়াক। বিচার বিভাগ সাংবিধানিক বিধান এবং আইনগত বিধানগুলো মানুক। এ উদ্যোগটা (সংস্কার উদ্যেগ) আমি মনে করি অনেক ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগের সাথে সবার একসাথে কাজ করা উচিত। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আমার যতটুকু ভূমিকা রাখা প্রয়োজন আমি ততটা রাখার চেষ্টা করব।
…….ডিডিজে নিউজ/এম এফ