সোনালী থেকে ১১০০ কোটি টাকা ধার নিতে চায় ইসলামী ব্যাংক

নানা অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ধার চেয়েছে ব্যাংকটি।

ইতোমধ্যে ওই টাকা ধার দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। তবে শর্ত হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি দেওয়ার কথা বলেছে সোনালী ব্যাংক।এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি চেয়ে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটিন (এসএলএফ) আওতায় আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার তারল্য সুবিধা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পৃথক চিঠি দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। তাদের এসব সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতও নানা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে

অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গ্রুপ। এ ছাড়া নাবিলসহ আরও কিছু গ্রুপে ঋণ বিতরণেও নানা অনিয়ম হয়েছে। এতে তীব্র তারল্য সংকটের মুখে পড়া ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংরক্ষণ করা চলতি হিসাবেও ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘদিন ব্যাংকটির চলতি হিসাব ঋণাত্মক হলেও লেনদেন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। টাকা ছাপিয়ে দেওয়া সেই বিশেষ সুবিধা এখন বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকটি তারল্য সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ধার চাচ্ছে।

আরও পড়ুন:  ব্যাংকে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমেছে

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রথম প্রজন্মের শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সারাদেশে ব্যাংকটির বর্তমানে ৩৯৫ শাখা, ২৫২ উপ-শাখা এবং ২ হাজার ৭৮৭টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। সম্প্রতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যাংক খাত থেকে আমানত তোলার চাহিদা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যাংকের ওপর তারল্য চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই দেশের ব্যাংকিং শিল্পসহ সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তিন মাসের জন্য আন্তঃব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা পেতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করার অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা ও নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিমেরও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:  বিশ্ব যুব উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, শুধু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ নয়, তারল্য সুবিধার জন্য গত কয়েক দিনে অনেক ব্যাংকই আবেদন করেছে। এ তালিকায় আরও আছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। তবে আন্তঃব্যাংক পদ্ধতিতে গ্যারান্টি চেয়ে কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশই চিঠি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা যায়, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি নিয়ে আন্তঃব্যাংক মার্কেট থেকে ধার নেবে সে বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করেছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, যে ব্যাংক ধার নেবে তার কাউন্টার পার্টি ব্যাংক থেকে আগে মৌখিক সম্মতি নিতে হবে। এরপর ধার নেওয়া ব্যাংকের বোর্ডে বিষয়টি তুলে অনুমোদন করাতে হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কত টাকা নেবে এবং তা কীভাবে পরিশোধ করবে, সুদহার কত হবে তার একটি পরিকল্পনা দিতে হবে। তিন মাসে ধার পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংকটি আরও ৯ মাস সময় পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি কমিশনও পাবে।

আরও পড়ুন:  সৌদি আরবের যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত

এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরে সোনালী ব্যাংক ১৪ দিনের জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। ‘কল অ্যান্ড শর্ট নোটিশ ডিপোজিট’ নামে পরিচিত তারল্য সহায়তার আওতায় এই অর্থ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাংকটির পর্ষদে অনুমোদন পায় এবং পরের দিনই এই অর্থ ইসলামী ব্যাংককে দেওয়া হয়। এই অর্থের মধ্যে সোনালী ব্যাংক তাদের অভ্যন্তরীণ ঋণসীমার বাইরে গিয়ে ৬২১ কোটি টাকা সরবরাহ করে এবং বিষয়টি তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও জানায়। সোনালী ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সেই সময় দেওয়া তারল্য সহায়তার মেয়াদ শেষ হলেও ইসলামী ব্যাংক এখনো পুরো টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।

 

…….ডিডিজে নিউজ/এম এফ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *