জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্বা, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, নিউটেক্স গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়াত আকরাম খান দুলাল এর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৭ সালের এই দিনে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পর দেশ মাতৃকার টানে তিনি স্বাধীনতা যু্দ্বে ঝাপিয়ে পরেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি চট্টগ্রামে ১নং সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলাম বীর প্রতিকের অধীনে যুদ্বে অংশ নেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে জীবন জীবিকার তাগিদে জার্মান পাড়ি দেন। দেশে ফিরে এসে রাজধানী ঢাকায় নিউটেক্স গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে সন্দ্বীপের অসংখ্য বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন।
সন্দ্বীপের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন নিখাদ সমাজসেবক হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলেন। নিজ জন্মস্থান সন্দ্বীপের দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিউটেক্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণে সারা জীবন নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন।যার ফলে এই কর্মবীরকে সন্দ্বীপের মানুষ শ্রদ্বাভরে স্মরণ করবে।
তিনি নিউটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইমপ্রেস নিউটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পরপর দু’বার সিআইপি মর্যাদা পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ টেক্সাইল মিলস এসোসিয়েশনের( বিটিএমএ) দু’বার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিজিএমইএ ডিরেক্টর, ঢাকা এফ এম (৯০.৪) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক,অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক,সন্দ্বীপ পাবলিক হাই স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি,শেখ জামাল ক্লাব,ধানমন্ডি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও আজীবন সদস্য ছিলেন। পূর্ব সন্দ্বীপ ইসলামীয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে সন্দ্বীপে বিএনপি জামায়াতের তান্ডবে হাজার হাজার নেতা কর্মী সন্দ্বীপ ছাড়তে বাধ্য হয়। অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো। সে সময় তিনি অসহায় নেতা কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
এছাড়া তিনি রাজনৈতিক প্রতিকূলতার ভেতরে তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
২০১৫ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভিত্তিক আকরাম খান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সন্দ্বীপের ক্রীড়াঙ্গনে অসাধারন অবদান রেখেছেন। এছাড়া সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্রিয়া গঠনগুলোর সাথে তিনি আমৃত্যু সম্পর্ক রেখেছেন। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় চট্টগ্রামের বিশ্বদরবারের সুফী সাধকের সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সন্দ্বীপের এই কৃতিসন্তান ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি মগধরা ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন। এই মহান কর্মবীর মুক্তিযোদ্বা ব্যক্তি জীবনে শুধুমাএ একজন শিল্পপতি ছিলেন না। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, দানবীর, সমাজসেবক, মানবদরদী ছিলেন। তাঁর কর্মের আলোক ছটায় তিনি বহুদিন বেঁচে থাকবেন সমাজে,রাষ্ট্রে।