আলহাজ শফিকুল আলম। মানুষকে মুগ্ধ করার আলোকিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছেন তিনি। আড্ডা এবং হাস্যরস যেন তাঁর সহজাত। জীবন সায়াহ্নে এসেও বুকের মধ্যে লালিত মানবতা, সামাজিকতা, সংগঠনপ্রিয়তা, কণ্ঠে বজ্রদীপ্ত কোনটাই লোপ পায়নি। হাঁটাচলা রাজকীয় কায়দায়, আড্ডার টেবিলে এখনও সরব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনড়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আজীবন মুজিব আদর্শের পতাকা বহন করেছেন এই নেতা।
ষাটের দশক থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন অতিবাহিত করেছেন। জীবন সায়াহ্নের শেষ দিকে এসে আমেরিকা এবং বাংলাদেশে বসবাস করেন। মার্কিন মুল্লুকে সন্দ্বীপ কমিউনিটির কাছে অতিপরিচিত তিনি। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুসহ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী এম এ হান্নান, এম এ আজিজের সাহচর্যে এসে রাজনীতি করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় চট্টগ্রাম থেকেই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শাহজাহান হোটেলে এ আন্দোলন নিয়ে নেতাকর্মীদের কথাবার্তা হচ্ছিল। এম এ আজিজ এর সাথে তিনি ছিলেন। এম এ আজিজ-এর হাত ধরে তার রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ। আন্দোলন চট্টগ্রাম নাকি কক্সবাজার শুরু হবে সে আলোচনার এক পর্যায়ে আমি (শফিকুল আলম) বঙ্গবন্ধুকে লক্ষ্য করে বলেছিলাম নেতা, আমার একটা কথা আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে একটা দ্বীপ আছে। নাম সন্দ্বীপ। সেখানকার লোকজন খোলা আকাশের নিচে বাস করে। ওখান থেকে যদি আন্দোলন আরম্ভ হয় তবে এ আন্দোলনের ডাক আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে যাবে।’ এই কথাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সামনে আমার প্রথম কথা। সে সময় আমি চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক একজন কর্মি ছিলাম। আমার কথা শুনে বঙ্গবন্ধু বললেন, এই চ্যাঙড়া যে জায়গার কথা বলেছে সেখান থেকেই আন্দোলন আরম্ভ হবে। একথা বলার সময় তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। আজকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না। বাংলায় কথা বলতে পারতাম না। একটি পতাকা পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর কথায় সন্দীপ থেকে ছয়দফা আন্দোলনের সূচনা হলো। সন্দীপের এলাকায় ছয় দফা আন্দোলনের সব কাজ তিনি পরিচালনা করেন। এভাবেই জীবনের নানা বন্ধুর পথ অতিক্রম করেছেন বঙ্গবন্ধুপ্রেমী এই নেতা।
এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রদান নিয়ে লন্ডনে আওয়াজ তুলেছিলেন তিনি। এছাড়া এক সময় ‘সন্দ্বীপ বাঁচাও’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতায় তিনি ক্রসবাঁধ, যাতায়াত সমস্যাসহ নানান সমস্যা সমাধানে অবদান রেখেছেন। এছাড়া তিনি আমেরিকার অভিবাসীদের নিয়েও কাজ করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নের বায়েজিদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৮০ বছর জীবনে তিনি অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন এই রাজনৈতিক। এখনও তিনি সুন্দর সাম্য আর সকলে মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন।