বন্দি চুক্তি: শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারতের ভূমিকা কী হবে?

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা, গুম-খুন এবং অর্থপাচারের অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ভারত-বাংলাদেশ বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ভারত সরকার হাসিনাকে ফেরত দিতে পারে কিনা? এ প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সাংবাদিক দীপ্তিমান তিওয়ারির ‘ক্যান শেখ হাসিনা বি এক্সট্রাডাইটেড টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ বন্দি বিনিময় চুক্তি করেছিল এবং ২০১৫ সালে এই চুক্তির আওতায় আসামের স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াসহ কয়েকজনকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রত্যার্পণ করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, বন্দি বিনিময় চুক্তিতে বলা আছে, ন্যূনতম এক বছরের সাজা হতে পারে এমন মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেই ভারত বা বাংলাদেশকে পলাতক বন্দি হস্তান্তর করতে হবে। যদি অপরাধ রাজনৈতিক হয়, প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। কিন্তু কোন কোন অপরাধকে ‘রাজনৈতিক’ বলা যাবে না, সে তালিকাও বেশ দীর্ঘ। যেমন হত্যা, নরহত্যা বা অপরাধমূলক হত্যা, আক্রমণ, বিস্ফোরণের কারণ, জীবন বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক পদার্থ বা অস্ত্র তৈরি বা নিজের কাছে রাখা, গ্রেপ্তার এড়াতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, জীবন বিপন্ন করার অভিপ্রায়ে সম্পত্তির ক্ষতি, অপহরণ বা জিম্মি, হত্যার প্ররোচনা এবং সন্ত্রাস সম্পর্কিত অন্য কোনো অপরাধ।

আরও পড়ুন:  সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণে ১৩ নির্দেশনা

তবে এ চুক্তিতে হত্যা, গণহত্যা, বোমা হামলা, গুলি করে হত্যা, সম্পত্তির ক্ষতি, গুম-অপহরণ বা জিম্মি করা এবং হত্যার প্ররোচনার মতো অপরাধের মামলায় ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেরই পলাতক আসামিকে ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ছাড়’এর বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস উল্লেখ করেছে, এই প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ছাড় রয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তিকে ফেরত চাওয়া হবে তার অপরাধটি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ হলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। তবে, এর মধ্যেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তাই এই প্রত্যর্পণ নিশ্চয়ই হবে, চুক্তি অনুযায়ী এমনটি বলাও যাচ্ছে না। কারণ, শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়ার এখতিয়ার আছে ভারতের। কেননা, চুক্তির আর্টিকেল ৮’এর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, যার প্রত্যর্পণ চাওয়া হবে তাকে ‘বিচারের আওতায় নেওয়ার উদ্দেশ্য বিশ্বাসযোগ্য’ মনে না হলে এই প্রত্যর্পণ নাও করা যেতে পারে। এদিকে, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনা প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত ১৫ আগস্ট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হচ্ছে। এখন স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাকে দেশে ফেরত দিতে আমাদের পক্ষ থেকে ভারতকে অনুরোধ করা হবে।’

আরও পড়ুন:  সারাদেশে ৫৯৯ থানার কার্যক্রম চালু

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত সরকারের জন্য এটি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। ভারত এটি জানে এবং আমি নিশ্চিত, তারা এ বিষয়ের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে।’ এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাওয়া হলে তারা তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলে ভারত কী করবে? সে ব্যাপারে এই চুক্তির সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) সাবেক এক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যেই কি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ নিহিত? না, বিষয়টি এমন নয়। কেবল চুক্তির বৈধতা কোনো ব্যাপার না। উভয় পক্ষের আইনজীবী রয়েছে।’

এ কর্মকর্তা আরও যোগ করেন, বাংলাদেশে অনেক মানুষ রয়েছে যারা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী রয়েছে, যারা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে মূল্য দেয়। তাই আমাদের একটি শক্তিশালী পক্ষ রয়েছে যারা সুসম্পর্কের পক্ষে। তাছাড়া ভৌগোলিক বাস্তবতা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যথেষ্ট কাঠামোগত সংযোগ রয়েছে। এই সম্পর্কের দিকনির্দেশনা নিয়ে এখনো উপসংহারে আসা হয়নি।

আরও পড়ুন:  মন্ত্রী-এমপির লাল পাসপোর্ট বাতিল করলো সরকার

এ প্রসঙ্গে আরও কয়েকজন ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তারা বলেন, ‘কোনো দেশ তাদের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে বন্দি বিনিময় করে না। এটা চুক্তি থাক বা না থাক। তবে যা কিছু হবে, তা রাজনৈতিকভাবে হবে।’

…….ডিডিজে নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *