মোহাম্মদ ফয়সাল আলম:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি বিশেষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তিনটি বিষয়ে জোর দিতে বলেছেন।
এই তিনটি বিষয় কী ছিল তা উল্লেখ করা হয়নি, তবে সাধারণত আইএমএফ-এর পরামর্শের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতি, এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রতি মনোনিবেশ করার পরামর্শ থাকতে পারে। এই মন্তব্যগুলো তিনি বাংলাদেশের অনুকূলে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের পর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে এই ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রাহুল আনন্দ বলেন, বাহ্যিক প্রতিকূলতা, অভ্যন্তরীণ নীতির অপর্যাপ্ততা সম্মিলিতভাবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার ওপর ধারাবাহিক চাপ পড়েছে। এসব হতাশাজনক পরিস্থিতিতেও সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশকিছু পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি কঠোর করেছে, বড় বিনিময় হারের ক্ষেত্রে নমনীয়তার অনুমতি দিয়েছে এবং একাধিক বিনিময় হার একীভূত করেছে। উল্লিখিত প্রচেষ্টার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান রাহুল আনন্দ। তিনি বলেন, প্রতিকূল পরিবেশে সামগ্রিকভাবে গৃহীত কর্মসূচি সন্তোষজনক। আমি জানতে পেরেছি যে, বেশির ভাগ কর্মসূচির লক্ষ্য এবং সংস্কারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে।
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে রাহুল আনন্দ সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি বেশকিছু প্রস্তাবও দিয়েছেন। এর মধ্যে রাজস্ব কর বাড়ানো এবং গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন খাতগুলোতে ব্যয় যৌক্তিক করা, মূল্যস্ফীতি কমানোসহ মুদ্রানীতি কাঠামোর আধুনিকীকরণ করা এবং ব্যাংক খাতে তদারকি বৃদ্ধিসহ আর্থিক খাতে সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ঋণ যুক্ত হলো রিজার্ভে
বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ যুক্ত হয়েছে, যা রিজার্ভের অবস্থা আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার রিজার্ভের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চলতি মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) সহ অন্যান্য ঋণের মাধ্যমে আরও ৬২ কোটি ডলার যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই মাসে মোট ১৩১ কোটি ডলার রিজার্ভে যুক্ত হবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফের বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়াবে ১৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।