থানা পুলিশসহ পুলিশের সব ইউনিট নিজস্ব ইউনিফর্মে কাজ শুরু করেছে। অনেক স্থানে পুলিশকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্র-জনতা। অবকাঠামোর ধ্বংস, যোগাযোগাব্যবস্থা বিচ্ছিন্নসহ গাড়ি পুড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ থানার কার্যক্রম জিডি ও অভিযোগ নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
দায়িত্বে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশও। সারাদেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত সীমিত আকারেই ৬২৮টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। থানা সংস্কারে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। সবার সহযোগিতায় পুলিশ হবে জনতার- এই প্রত্যয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাহিনীটি।
পুলিশ জানিয়েছে, ইউনিফর্ম পরেই সোমবার ডিউটি শুরু করেছে থানা ও ট্রাফিক পুলিশ। থানায় শুধু জিডি ও জরুরি অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে। হত্যা, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধের মামলা দায়ের হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হারানো জিডি হচ্ছে। থানাভেদে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১০টি জিডি হচ্ছে। তবে অবকাঠামো ও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মামলার তদন্ত, পেট্রোল ডিউটি ও গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়নি।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর রমনা থানায় গিয়ে দেখা যায়, অনেকটাই ফাঁকা। থানার সামনে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা ডিউটি করছেন। প্রবেশমুখেই ডানপাশে ডিউটি অফিসার বসে আছেন। থানার ওসি উৎপল বড়ুয়ার কক্ষও ফাঁকা। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, তিন দিন হলো থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিদিন অল্প কয়েকটি জিডি হচ্ছে। গত রবিবার পাঁচটি জিডি হয়েছে। থানার কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে লোকজন কম জানার কারণে অভিযোগও কম আসছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, তার থানার পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর কোনো গুলি ছোড়েনি এবং কোনো পুলিশ সদস্যও আহত হননি কিংবা পুলিশের হাতেও কেউ আহত হয়নি। তাই থানাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে দুপুর থেকেই দেশের থানাগুলোয় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গণবিক্ষোভের মুখে থানা রেখে নিরাপদে চলে যায় পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪৫০টি থানা। ডিএমপির যেসব থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে মোহাম্মদপুর থানা অন্যতম। আগুনে পুড়ে গেছে থানার অবকাঠামো। গত তিন দিন ধরে এই থানাটি স্বেচ্ছায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, চুনকামসহ থানাকে ব্যবহার উপযোগী করতে তারা কাজ করছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থানার সংস্কারকাজে অংশ নিয়েছেন। অগ্নিসংযোগের কারণে অবকাঠামোসহ লজিস্টিক সাপোর্ট পুড়ে যাওয়ায় কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি গুলশান বিভাগের ভাটারা থানা। কাজ শুরুর জন্য থানাটি প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান বাড্ডা জোনের এসি রাজান সাহা। ডিএমপি জানিয়েছে, থানাগুলোয় ইন্টারনেট সেবা, ওয়্যারলেস, গাড়ি ও অস্ত্রের ব্যবস্থাপনার পর টহল কার্যক্রম, পরোয়ানা তামিল, মামলার তদন্ত শুরু হবে। এতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
সাত দিনের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র জমার নির্দেশ : সাত দিনের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র থানা জমা দেওয়ার জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। বেসামরিক মানুষের হাতে নিষিদ্ধ ৭.৬২ এমএম রাইফেল পাওয়া গেছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র আছে, তা সাত দিনের মধ্যে থানায় জমা দিতে হবে। অন্যথায় দুটি চার্জ লাগবে। একটি হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র, আরেকটি হচ্ছে সরকারি নিষিদ্ধ অস্ত্র আপনাদের হাতে। আগামী সোমবারের মধ্যে এগুলো ফেরত দিতে হবে।
সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ : আন্দোলন-সহিংসতার জেরে এক সপ্তাহের অচলাবস্থার পর সড়কে কাজে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ। গতকাল সকালে রাজধানীর ফার্মগেট, প্রেসক্লাব, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালীসহ বিভিন্ন সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তবে যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ এখনো কাজ শুরু করেনি। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা এখনো সড়কে আছেন। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম।
এদিকে দেশের কয়েকটি স্থানে কাজে ফেরা পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেছেন, গতকাল সোমবার আবার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিয়েছেন। মিরপুরের ১৫টি স্থানে, গুলশানে ৯টি স্থানে, উত্তরায় পাঁচটি স্থানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ সপ্তাহের মধ্যে সবাই যোগ দেবেন বলে আশা করা যায়। তবে যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সেখানে কিছু পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।
এ ছাড়া রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, রাজবাড়ী, নাটোর, রাঙামাটি, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, জয়পুরহাট, বাগেরহাট ও মাদারীপুরসহ দেশের বেশিরভাগ জেলায় গতকাল পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন বলে ব্যুরোপ্রধান, নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।