সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন থেকে একের পর এক পদত্যাগ করছেন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এসব শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় অস্থিতিশীল ক্যাম্পাসে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতা গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার পালাবদলের পর দাবি উঠে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারের এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের। এর ধারাবাহিকতায় স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চলছে অস্থিরতা। আওয়ামীপন্থি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের শীর্ষ কর্তকর্তারা তোপের মুখে পড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। এর ধারাবাহিকতায় পদত্যাগ শুরু করেন বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য প্রশাসন সংশ্লিষ্ট অনেক শিক্ষক।
বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে আমাদের সময়কে বলেন, যা ঘটছে, এটি নতুন কিছু নয়। রাজনীতিক পদগুলো পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে আসছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসুক। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া আর বিলম্বিত না হোক। বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছে। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ে যে অস্থিরতা দেখছি, সে বিষয় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল শনিবার পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। তিনি ছাড়াও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হলের প্রভোস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই দিন পদত্যাগ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম কামরুজ্জামান।
এর আগে পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ। ৮ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ ঊর্ধ্বতন ২৯ প্রশাসক ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া পদত্যাগ করেছেন।
গত ৭ আগস্ট পদত্যাগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ সাহাবুদ্দিনের কাছে ই-মেইলযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। একই দিন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশীদ পদত্যাগ করেন। ৬ আগস্ট টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেনসহ প্রশাসনিক পদ থেকে ছয় শিক্ষক পদত্যাগ করেন।
বিক্ষোভ চলছে : নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের পদত্যাগসহ ৪ দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তা না মানায় গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যের কক্ষের সামনে নামফলক থেকে নাম সরিয়ে নেয় তারা। আগের দিন শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে আছেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) উপাচার্য ড. নাসিম আখতার। তার পদত্যাগ দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে উপাচার্য ড. মো. নাসিম আখতার আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে গত ৬ আগস্ট থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।