শেখ হাসিনা সরকারের পতনে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আগেই দেশ ছেড়েছেন। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কোথায় আছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। এদিকে দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯ কাউন্সিলরের অধিকাংশই আত্মগোপনে রয়েছেন। যারা আছেন তারা কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন না এবং কথাও বলতে চাইছেন না। ফলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে তারও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর সিটি করপোরেশন অফিস চালু হলেও আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় অংশই অনুপস্থিত রয়েছেন। মেয়র ও কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির কারণে উন্নয়নমূলক কাজ, ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যুসনদ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সেবা গ্রহীতারা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি একেবারেই কম। উপস্থিত কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়র কাউকে কিছু না বলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এতে সবার মন খারাপ। করপোরেশনের আর্থিক বিষয় সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ফাইল অনুমোদনে মেয়রের স্বাক্ষরের প্রয়োজন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আপাতত সমস্যা না হলেও খুব শিগগিরই জটিলতায় পড়বে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
আইন অনুযায়ী মেয়রের অনুপস্থিতিতে তিনজন প্যানেল মেয়রের (কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে নির্ধারিত) মধ্য থেকে জোষ্ঠ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারেন। যেহেতু প্যানেল মেয়ররা আওয়ামী লীগে পদ-পদবিতে রয়েছেন, তাই তাদের অফিস করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রই ৫ বছর মেয়াদের শেষ বছরে রয়েছেন। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকেই নির্বাচনের কাউনডাউন শুরু হবে। তাই শেষ মুহূর্তে প্যানেল মেয়র নাকি প্রশাসক নিয়োগ হবে, তা নিয়ে রয়েছে আলোচনা। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হলে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কবে থেকে অফিস করবেন জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, ‘মেয়র কবে থেকে অফিস করবেন এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রয়েছে। এই মুহূর্তে এমন কোনো আর্থিক ফাইল নেই যেগুলোতে তার সরাসরি অনুমোদন দরকার। এখন নতুন সরকার গঠন হয়েছে। সরকার যেভাবে বলবে সেভাবেই চলবে।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে বলেন, সরকার পদত্যাগের আগেই মেয়র পালিয়ে গেছেন। তিনি আর নগর ভবনে আসবেন বলে মনে হয় না। কারণ ফিরলেই ভয়াবহ রোষানলে পড়তে পারেন তিনি। দক্ষিণের এক স্বতন্ত্র কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে বলেন, মেয়রকে কেন সরকার পতনের আগেই দেশ ছাড়তে হলো। যাওয়ার আগে কাউকে কিছু বলে যাননি। সিটি করপোরেশন কীভাবে চলবে তারও কোনো নির্দেশনা দেননি। ডিএসসিসির চলতি মেয়াদের শেষ বছরে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ রয়েছে। আগামী নির্বাচনে এসব কাজ ভোটারদের কাছে তুলে ধরতে হয়। এখন সবকিছু বন্ধ। সরকার থেকেও কোনো নির্দেশনা নেই। নতুন সরকারে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় দেখতে হবে।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান বলেন, আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ আগের চেয়ে ভালোভাবে চলমান রয়েছে। প্রতিটি কর্মী রাত-দিন পরিশ্রম করে প্রতিটি ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখছে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কোথাও বন্ধ নেই।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর ১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আর ১৩ মে দায়িত্ব বুঝে নেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। উত্তর সিটির প্রথম বোর্ড সভা হয়েছিল ২০২০ সালের ৩ জুন। কাছাকাছি সময়ে দক্ষিণেরও বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-এর ৬ ধারা অনুযায়ী করপোরেশনের মেয়াদ হবে করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম সভার তারিখ হতে ৫ বছর। তবে শর্ত থাকে যে, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও পুনর্গঠিত সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা যাবে। ফলে দুই মেয়রের মেয়াদকালও প্রায় শেষ। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে।