স্তনে ব্যথা করা মানেই স্তন ক্যানসার নয়

স্তনে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা এবং এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। অনেক নারী স্তনে ব্যথা হলে স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা করেন, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

কিছু সাধারণ কারণ ও পরিস্থিতি যা স্তনে ব্যথার কারণ হতে পারে তা হলো:

  • হরমোন পরিবর্তন: মাসিক চক্র চলাকালীন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক নারীর স্তনে ব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত মাসিকের পূর্বে বা চলাকালীন হয় এবং মাসিক শেষ হলে ব্যথা কমে যায়।
  • আঘাত: কোনো আঘাত বা চোটের কারণে স্তনে ব্যথা হতে পারে।
  • ব্রা: অনুপযুক্ত আকারের বা টাইট ব্রা পরার ফলে স্তনে ব্যথা হতে পারে।
  • স্তন পেশির টান: স্তনের আশেপাশের পেশির অতিরিক্ত টান বা স্ট্রেসও ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • অন্য শারীরিক সমস্যা: যেমন ফাইব্রোসিস্টিক স্তন, যেখানে স্তনের টিস্যুতে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।

কিছু টিপস যা স্তনে ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে:

  • সঠিক আকারের এবং আরামদায়ক ব্রা পরা।
  • নিয়মিত শারীরিক চেকআপ করানো এবং প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
  • ব্যথা কমানোর জন্য গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা চর্বিযুক্ত খাবার কমানো।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং স্ট্রেস কমানো।
আরও পড়ুন:  স্মার্টফোন কখন রিসেট করতে হবে, কীভাবে করবেন

যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন স্তনে গাঁট বা স্রাব, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আসুন, জেনে নিই স্তনে ব্যথা হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে

দেহে হরমোন পরিবর্তনে স্তনব্যথা : পিরিয়ড চলাকালীন কিশোরীদের স্তনে হালকা ব্যথা অনুভব হয়। অনেক সময় পিরিয়ড হওয়ার আগেও স্তনে ব্যথা হয়। পিরিয়ড হওয়ার আগে ও পরে দেহে হরমোনের পরিবর্তনে এ ব্যথা হয়ে থাকে। পিরিয়ড শেষ হয়ে গেলে ব্যথা আর থাকে না।

গর্ভকালীন স্তনব্যথা : গর্ভধারণকালে নারীরা স্তনে ব্যথা অনুভব করেন। সাধারণত গর্ভবতী হওয়ার তিনমাসের মাথায় স্তনে ব্যথা হওয়া শুরু হয়। কারণ তখন স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় স্তনের ওপর দিয়ে নীল শিরা দেখা যায়। এর কারণ তখন দেহে অনেক বেশি পরিমাণে রক্ত প্রবাহ হতে থাকে ও হরমোনের অনেক পরিবর্তন ঘটে।

প্রদাহ : নারীর স্তনে প্রদাহজনিত সমস্যায় স্তনে ব্যথা অনুভব হতে পারে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাসের আক্রমণ এটি হয়ে থাকে। এ ব্যথার জন্য আপনার জ্বরও আসতে পারে। এই সমস্যায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:  সন্দ্বীপে বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু

স্তনের মধ্যে সিস্ট : অনেক সময় স্তনের মধ্যে এক ধরনের সিস্ট হয়ে থাকে। এর ভেতরে তরল জাতীয় পদার্থ থাকে। এর নাম ব্রিজ সিস্ট। স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পেলে অনেক সময় এ সিস্ট দেখা যায়। এতে স্তনে ব্যথা হয়। সিস্ট অনুভব করতে পারলে যত দ্রুত সম্ভব স্তন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময় : কোনো নারী মা হওয়ার পর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় স্তনে ব্যথা পেয়ে থাকেন। সবসময় সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর আগে ও পরে স্তন পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। কারণ এতে করে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাস হওয়ার আর আশঙ্কা থাকে না।

স্তনে ঘা : এ সমস্যাটি হয়ে থাকে মূলত যখন স্তনের নিপলে ব্যাকটেরিয়া দেখা দেয় এবং সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময় যখন ভাইরাস আক্রমণ করে।

স্তনে ক্যানসার : বুকব্যথার মারাত্মক কারণ স্তন ক্যানসার। তবে দীর্ঘদিন স্তন ক্যানসারে ভুগলেই কেবল এ ব্যথা হয়।

আরও পড়ুন:  ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য সুখবর

প্রতিকার : উল্লিখিত কারণগুলোয় খুব স্বাভাবিকভাবেই স্তনে ব্যথা হতে পারে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের জীবনচর্চায় কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসি, তা হলে হয়তো স্তনে ব্যথা হওয়ার প্রবণতা কমে আসতে পারে। তাই স্তনব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হলোÑ আপনার স্তনের মাপ অনুযায়ী ব্রা পরুন। ছোট মাপের ব্রা এড়িয়ে চলুন। কম চর্বিযুক্ত স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। হরমোনের সমস্যা দূর করতে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-ই১ (থায়ামিন) ও ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি খেতে হবে। ব্যথা কমানোর ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। ড্যানাজোলের প্রয়োগ। ক্যাফাইন এড়িয়ে চলুন। লবণ কম খাবেন। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডিডিজে নিউজ// মোহাম্মদ ফয়সাল আলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *