চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা ও হঠাৎ বন্যার খবর উদ্বেগজনক। চট্টগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং কক্সবাজারের সাত উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে বন্যার কারণে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও, বান্দরবানে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
এসব পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এই পরিস্থিতির মোকাবেলায় কিছু কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে:
- দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা।
- বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করা।
- জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- বন্যার পর বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা।
- ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় টেকসই এবং কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভারী বর্ষণের সঙ্গে অমাবস্যার প্রভাবে সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতাও বেশি থাকায় চট্টগ্রাম শহরের ভেতর দিয়ে কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরে প্রবাহমান সব খালের মুখে স্থাপিত স্লুইসগেটগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে শহরের নিচু এলাকা ডুবেছে। ময়লার ভাগাড় ভেঙে পড়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এক কর্মচারী মারা গেছেন। মৃত কামাল হোসেনের (৪০) বাড়ি চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ। তিনি চসিকের আরেফিন নগরে অবস্থিত বিশ্ব কবরস্থানের কবর খননকারী এবং আরেফিন নগরে চসিকের ভাগাড়ের আবর্জনা থেকে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করতেন। বায়েজিদ থানার ওসি সনজয়
সিনহা জানান, সকালে জিনিসপত্র কুড়ানোর সময় প্রবল বৃষ্টিতে ভাগাড়ের একাংশ ভেঙে কামালের ওপরে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
রাতভর বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বড় এলাকা এবং হালিশহরের নিচু এলাকা ডুবে যায়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর আমাদের সময়কে বলেন, আগের দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১৪৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবারও মাঝারি বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের চেইন্দা এলাকা হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া চকরিয়া-মানিকপুর সড়ক, রামু-নাইক্ষ্যংছড়িসহ জেলার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কে বন্যার পানি উপচে পড়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
উখিয়া, টেকনাফ চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও সদর উপজেলার ৭০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে এসব এলাকার দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে।
পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বাকখালী নদীর তীরবর্তী রামু ও সদর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৫০ হাজার বাসিন্দা হঠাৎ করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়াসহ ১ নম্বর ওয়ার্ডে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ৫শ বাড়িঘর।
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন ও টেকনাফের হ্নীলা ও হোয়াইকং ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
অন্যদিকে বান্দরবানের আবাহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০৪ মিলিমিটার। এতে আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে লামাবাজার, নয়াপাড়া, সাবেক বিলছড়ি, আলীকদমের কাকরাঝিড়ি, চৈক্ষ্যং এলাকা, রাফারিবাজার ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকূল, ক্যাম্পপাড়া, ঘোনারপাড়া, হিন্দুপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া ও মধ্যমপাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হওয়াতে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। এ ছাড়া সাঙ্গু ও মাতামহুরী নদীসহ ছোট-বড় খালে পানি বিপদসীমায় উঠে গেছে; বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আলীকদম-লামা-চকরিয়া সড়ক যোগাযোগ।
জেলা প্রশাসক শাহ মোহাজিদ উদ্দিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। পাহাড়ধসের এলাকাগুলোয় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা।