জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আলোচনার সূত্রপাত তার বিপুল সম্পদ নিয়ে, যার মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মীর হোসেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

জাহাঙ্গীরের চারতলা বাড়ি নাহারখিল গ্রামে অবস্থিত। বর্তমানে বাড়ির নিচতলায় মীর হোসেন থাকলেও, দোতলা ও তিনতলা ফাঁকা এবং তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। জাহাঙ্গীরের প্রথম স্ত্রী ও এক সন্তান বাংলাদেশে থাকলেও, দ্বিতীয় স্ত্রী ও তিন সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। জাহাঙ্গীর সম্প্রতি তাদের কাছেই চলে গেছেন।

আপনার যদি এ বিষয়ে আরও তথ্য বা ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়, দয়া করে জানান। জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেছে। তার বড় ভাই মো. মীর হোসেন জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল এবং তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করতেন। তবে, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরের বিপুল সম্পদের বিষয়ে কথা শোনার পর মীর হোসেন লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়েন। সংবাদটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর জানা যায়, জাহাঙ্গীর রাতেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি কারণ তার ব্যক্তিগত সব মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন:  বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় দুই মালিকসহ গ্রেপ্তার ৩

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলমের অর্থসম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে তার বাসার সাবেক এক পিয়নের সম্পদের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানালো এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এই পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। মোবাইলে বার্তা দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে পাওয়া তথ্য অনুসারে, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসায় পিয়ন হিসেবে কাজ করতেন এবং পরবর্তীতে তার নাম উল্লেখ করা হয় দুর্নীতি এবং অর্থসম্পদের বিষয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

জাহাঙ্গীর আলম ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদে এবং প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় মেয়াদের কিছু সময় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। বিরোধী দলে থাকার সময়ও তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সুধা সদনে ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে ছিলেন। তবে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী পরিচয়ে সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন:  গ্যাস নেয়ার সময় বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, ৩ প্রাণহানি

এই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও লাভ করেন এবং নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, বিশেষ করে যেহেতু তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিপুল সম্পদ অর্জনের প্রশ্ন উঠেছে।

জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আরও তথ্য জানা গেছে। জেলা গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর বুঝতে পেরেছেন যে যেকোনও সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এই কারণেই তিনি যেকোনও উপায়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছেন এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) রবিবার বিকালে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদের উৎস এবং দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুন:  অরুণাচল সীমান্তে চীনের হেলিপোর্ট নিমার্ণ, চাপে নয়াদিল্লী

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩(১)(গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।

জাহাঙ্গীর আলমের যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সত্য নাকি মিথ্যা, তা জানি না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *