মোশাররফ হোসেন খাদেম
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় তিনটি ভুল হয়েছে, যার খেসারত জাতিকে আগেও দিতে হয়েছে, এখনও দিতে হচ্ছে, আগামীতেও দিতে হবে।
ক. মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়া।
খ. স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে (চব্বিশে মার্চ থেকে ষোলই ডিসেম্বর পর্যন্ত) যারা পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছে, তাদের চাকরিতে বহাল রাখা।
গ. যুদ্ধ শেষে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ফেরত সেনাবাহিনী,বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের এবং সাধারণ প্রশাসনের লোকজনকে বাংলাদেশ সরকারের চাকরিতে কোনরূপ যাচাই-বাছাই না করে সরাসরি আত্মীয়করন করা।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের এতো বছর পরও,যারা ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের এখনও গ্রামে থাকতে হয় এবং চাষাবাদ করে জীবন অতিবাহিত করতে হয়।ভিয়েতনাম সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী এখনো প্রতিনিয়ত তাদের পর্যবেক্ষণে রাখে।তাদের সন্তানদের কোন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয় না।
উপরোক্ত তিনটি ভুলের কারণে, স্বাধীনতার বিরোধীরা ৭৫ পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। সংগঠিত হয়ে দেশের শাসন ক্ষমতার অংশীদার হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিল। তারা যে কোন সময় সুযোগ পেলে যে কাজটি প্রথম করে থাকে,,সেটা হচ্ছে সুকৌশলে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তি যোদ্ধাদের সাধারণ মানুষের নিকট হেয় প্রতিপন্ন করা।
বর্তমানে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকেও তারা পূঁজি করে মুক্তি যোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সাধারণ মানুষ ও নতুন প্রজন্মের নিকট বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। কোটাতে শুধু মুক্তি যোদ্ধাদের জন্য নয়,অন্য কয়েকটি ক্যাটাগরিও রয়েছে। ঐসব ক্যাটাগরি নিয়ে কোন মন্তব্য না করে শুধুমাত্র মুক্তি যুদ্ধা ক্যাটাগরি নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে প্রশ্ন তুলেছেন।তাহলে কি কোটার প্রয়োজন নেই?
তবে আমি মনে করি এখনও আমাদের দেশের আর্থিক ও সামাজিক ব্যবস্থার কারণে কোটার প্রয়োজন আছে। তবে পূর্বের নির্ধারিত কোটা পূনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। পূর্বের বিভিন্ন পরীক্ষায় ফলাফল বিবেচনা করে এবং দেশের সমাজ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ গ্রহণ পূর্বক প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে কোটা পূনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। উল্লেখ্য যে, এখন পর্যন্ত মুক্তি যোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত কোটা কোন বিসিএস পরীক্ষায় কখনো শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানাযায় । সে কারণে উক্ত কোটা পূনর্বিন্যাসের যুক্তিকতা রয়েছে। তবে মুক্তি যোদ্ধাদা কোটা অবশ্যই থাকতে হবে।কিন্তু মুক্তি যোদ্ধাদের নাতি নাতনির জন্য কোটা বরাদ্দ রাখা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না।সরকারের উচিত বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
লেখক- সাবেক অতিরিক্ত সচিব।