মোহাম্মদ ফয়সাল আলম:
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য প্রস্তাব গৃহীত হওয়াটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১০ জুলাই জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৫৬তম অধিবেশনে এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
এই প্রস্তাবে মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং মিয়ানমারকে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি সঞ্চিতা হক জানান, সীমিত সম্পদ ও নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে উঠে এসেছে, যা সংকট নিরসনে সহায়ক হতে পারে।
মানবাধিকার পরিষদের চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ১০ জুলাই জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি সঞ্চিতা হক বলেন, অপ্রতুল সম্পদ ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
সঞ্চিতা হক আরও বলেন, বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া, দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি রাখাইনে দ্রুত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের শুরু করার ওপর জোর দেন।
এই প্রস্তাবের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগির বিষয়টি পুনরায় গুরুত্ব পেয়েছে, যা সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবটিতে সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, বাস্তুচ্যুত করা এবং তাদের জোরপূর্বক বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবটি মিয়ানমারে যুদ্ধরত সকল পক্ষকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।
প্রস্তাবে মিয়ানমার সংঘাতের কারণে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং মিয়ানমারকে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। গৃহীত প্রস্তাবটিতে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের জন্য অপর্যাপ্ত ও সংকুচিত আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এটি স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয় এবং এই প্রস্তাবের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষা ও তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
গৃহীত প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সকল প্রকার নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়ায় আনতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এতে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (ICJ) চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সকল প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে মিয়ানমার বিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন’-এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতির উপর মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাবের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রয়োজনীয়তা পুনরায় জোরদার হয়েছে। প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার দিকে একটি বড় অগ্রগতি নির্দেশ করে।